বাংলাদেশ বিমান বন্দরগুলোর সেফটি এবং সিটিউরিটি ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পসহ ৯টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নিবার্হী কমিটি (একনেক)। এ প্রকল্পগুলোতে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরার হয়েছে ৭ হাজার ৯০০ কোটি ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৮৫ কোটি টাকা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্পোর মাধ্যমে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসহ যশোর ও সৈয়দপুর বিমান বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা হবে। ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। জুলাই-২০১৪ থেকে জুন-২০১৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। মন্ত্রী বলেন, দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিদ্যমান বিমান বন্দরগুলোতে এয়ার ট্রাফিকের পরিমান দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু উড়োজাহাজ পরিচালনা ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থার উন্নয়ন সেভাবে তাল মিলিয়ে করা হয়নি।
তিনি বলেন, ফ্লাইট ইনফরমেশন রিজিয়নের কাজ সহজ করতে বিভিন্ন ধরনের রাডার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এ রাডারগুলো ২৫ বছরের বেশি পুরোনো হয়ে গেছে যা ঠিকমত কাজ করছে না। এ জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের জন্যে প্রাইমারি সার্ভিলেন্স রাডার ও সেকেন্ডারি সার্ভিলেন্স রাডার সংগ্রহ করা হবে। অন্যদিকে যশোর ও সৈয়দপুর বিমান বন্দরের ২৫ বছরের পুরোনো কনভেন্সনাল ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওমনি ডাইরেকশনাল রেডিও রেঞ্জ (সিভিওআর) কে আধুনিক ডপলার ভিওআর দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হবে। মন্ত্রী বলেন, সোনাসহ সব ধরনের চোরাচালান রোধ করতে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে একটি কমপ্রিহেনসিভ সিকিউরিটি সিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে বিমান পরিবহন সেবা কার্যক্রম আরো গণমুখি হবে। সেই সঙ্গে চোরাচালানও রোধ হবে।
এদিকে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বোয়িং ৭৭৭, ৭৪৭ ও এয়ার বাস ৩৩০ এসব সুপরিসর উড়োজাহাজের উঠানামা ও চলাচল সহজ ও নিশ্চিত করতে অবকাঠামো উন্নয়ন করছে সরকার। হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের আপগ্রেডেশন (১ম সংশোধিত) নামক একটি সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় এ আপগ্রেডেশনের কাজ করা হবে। একনেক সভায় সংশোধিত প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটির ব্যয় ছিল ৪১৪ কোটি টাকা। জুলাই-২০০৮ থেকে ডিসেম্বর-২০১৫ মেয়াদে সংশোধিত এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। মোট ব্যয়ের মধ্যে ৩২৮ কোটি টাকা ডেনিশ সরকার এবং বাকি ৮৫ কোটি টাকা সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে হবে। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এটি বাস্তবায়ন করবে।
এ ছাড়া বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ১১ জেলার সাড়ে চার লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছেন। এ জন্য সরকার ১০ হাজার ৭০০ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুৎ লাইন ও এক হাজার ৩০০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন পুনর্বাসন করছে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। আজকের একনেক সভায় এ সংক্রান্ত দু’টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদিত এ প্রকল্প দু’টি হলো- পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ বরিশাল বিভাগীয় কার্যক্রম-২ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণ খুলনা বিভাগীয় কার্যক্রম-২।
প্রকল্প দুটি নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও সঞ্চালনকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ জন্যেই ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর ও সাতক্ষীরা এই ১১টি জেলায় বিদ্যুৎ বিতরণ বাড়াতে একনেক সভায় প্রকল্প দুটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করবে। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। ২০১৮ মেয়াদে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্প দুটির আওতায় ২৫টি নতুন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রও নির্মিত হবে।
একনেক সভায় দারিদ্র্য পিড়ীত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি (২য় সংশোধিত) প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিন হাজার ১৪৫ কোটি ৫২ লাখ টাকার এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণায়ের অধীনে প্রথামিক শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্পের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, এটি একটি বড় প্রকল্প, এ পকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র এলাকার স্কুলগুলোতে বিনামূল্যে বিস্কুট বিতরণ করা হবে। এতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসাতে মনোযোগী হবে এবং তাদের পুষ্টিহীনতা দূর হবে।
এ ছাড়া নতুন ডাকাতিয়া পুরাতন ডাকাতিয়া ছোট ফেনী নদী নিষ্কাশন (দক্ষিণ কুমিল্লা ও উত্তর নোয়াখালী সমন্বিত নিষ্কাশন প্রকল্পের অংশ) (৫ম সংশোধিত), ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্ট (১ম সংশোধিত,জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক প্রস্তুতকরণ ও মজবুতীকরণ এবং গ্রামীণ রাস্তায় ছোট ছোট (১২ মিটার দৈর্ঘ্য পর্যন্ত) সেতু/কালভার্ট নির্মাণ (৩য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত) নামক প্রকল্পগুলোও অনুমোদিত হয় একনেক সভায়।