ঢাকা: আজ শনিবার সমাবেশের অনুমতি না পাওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার বিএনপি থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। একই সঙ্গে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে ৯ই জুলাই সোমবার অনশন কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
গতকাল নয়া পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী আহমেদ বলেন, অনুমতি না পাওয়ায় শনিবার বেলা ২টায় নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছিল। সেখানেও পুলিশ অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে রোববার থানায় থানায় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হবে। বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে যথাসময়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, একই দাবিতে আগামী ৯ই জুলাই সোমবার ঢাকাসহ সারা দেশে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালিত হবে। এর জন্য দলের পক্ষ থেকে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স এবং ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে অনুমতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ঢাকার যেই স্থানে অনুমতি পাওয়া যাবে সেখানে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে।
একটি জাতীয় দৈনিকে ‘তারেকের টেবিলে বিএনপির ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সমালোচনা করে এ সময় তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি শুধু হাস্যকরই নয়, এটি সরকারের মিথ্যা প্রপাগান্ডার এক উদ্বেগজনক সংযোজন। আমরা নিশ্চিত যে, বিশেষ সংস্থার নির্দেশেই প্রতিবেদনটি তৈরি ও প্রকাশ করা হয়েছে। সারা দেশের মানুষ যখন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে সোচ্চার তখন জনদৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে সরানোর জন্য আওয়ামী সরকারের নির্দেশে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। সরকার সবদিক থেকে যে মুহূর্তে ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে এই বানোয়াট সংবাদটি প্রচার করা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দেশের অর্থনীতি বিশেষভাবে ব্যাংকিং সেক্টরে অভাবনীয় লুটপাট ও বিদেশি ব্যাংকে ক্ষমতাসীনদের বিপুল পরিমাণ গচ্ছিত অর্থের খবর জাতির সামনে উন্মোচিত হওয়া, কোটাবিরোধী দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত তরুণদের গণতান্ত্রিক দাবির আন্দোলনে ছাত্রলীগের বর্বরোচিত গুণ্ডামি হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীকেও লজ্জায় ফেলতো। দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের ক্ষোভের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা এবং সদ্য শেষ হওয়া খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে নির্লজ্জ ভোট কারচুপি ও ভোট সন্ত্রাসের চিত্র নিয়ে যখন দেশ-বিদেশ থেকে নিন্দা জানানো হচ্ছে তখন একটি সরকার-ঘনিষ্ঠ পত্রিকার মাধ্যমে নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ও মনোনীত প্রার্থীদের একটি মিথ্যা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত কারাবন্দি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ইস্পাতকঠিন ঐক্য বিভ্রান্ত করা এবং নেতাকর্মীদের মনকে নড়বড়ে করার জন্যই সরকার-সমর্থিত ওই পত্রিকার দ্বারা হাস্যকর ও বিভ্রান্তিমূলক সংবাদটি পরিবেশন করিয়েছে সরকার। এ ছাড়া এমন সংবাদ পরিবেশন করিয়ে দেশবাসী ও বিদেশিদের দেখানো হচ্ছে যে, দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। পত্রিকাটি কোন টেলিস্কোপের মাধ্যমে সুদূর লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের টেবিলে ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকার সন্ধান পেয়েছে? নতুন আবিষ্কৃত দূরবীক্ষণ যন্ত্রটির নাম জনসমক্ষে জানালে প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী হাভেল এর নামের সঙ্গে পত্রিকাটির প্রতিবেদকদের নামও মহাবিজ্ঞানী হিসেবে ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে এবং বহু আন্তর্জাতিক খ্যাতিও মিলবে। তিনি বলেন, উক্ত প্রতিবেদনের সংশ্লিষ্টরা শুধু জ্যোতির্বিজ্ঞানীই নন, সিদ্ধ পুরুষও বটে। কারণ তারা মন্ত্রবলে মৃত মানুষকেও জীবিত করতে পারেন। কারণ প্রতিবেদনে কয়েক বছর আগে বিএনপির মৃত কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যের নামও আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য মনোনীত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন সদ্য প্রয়াত জয়পুরহাট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোজাহার আলী প্রধান, কুমিল্লা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মরহুম খোরশেদ আলম, চাঁদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর হায়দার খান, রাজশাহী-৬ আসনে মরহুম আজিজুর রহমান প্রমুখ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রতিনিয়তই দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর রাখছেন। তাঁর টেবিলে ৩০০ প্রার্থীর নামের তালিকায় মৃত ব্যক্তিদের নাম আসলো কিভাবে? সুতরাং প্রতিবেদনটি আগাগোড়াই মনগড়া ও কাল্পনিক এবং বিএনপির বিরুদ্ধে সরকার ও তাদের এজেন্সিগুলোর ধারাবাহিক চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রের নীলনকশায় আরেকটি সংযোজন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দেশব্যাপী সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা সম্পূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে আবারও জানিয়ে দিতে চাই, দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির আন্দোলন দিনের পর দিন আরো বেগবান করতে দলের নেতাকর্মীরা অঙ্গীকারবদ্ধ। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের আন্দোলনই এখন বিএনপির একমাত্র কর্মসূচি। এই কর্মসূচি বাদ দিয়ে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রার্থী তালিকার প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণরূপে বানোয়াট, এটি সরকারের নোংরা কূটকৌশল। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নতুন রাষ্ট্রদূতকে বলেছেন যে, চলতি বছরের শেষের দিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে গতকাল দলীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপিদের বলেছেন- আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। বিএনপি নির্বাচনে আসবে এটি ধরে নিয়েই সবাইকে এখন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই- আপনি কোন আধ্যাত্মিক ক্ষমতার জোরে জানতে পারলেন যে, আপনার অধীনেই বিএনপি নির্বাচনে আসবে? আপনি তো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে লোহার সিন্দুকে আটকিয়ে রেখেছেন। আর অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনকে আপনি পুলিশের রাইফেলের নলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আপনার অধীনে জাতীয় নির্বাচন আর নেকড়ের অধীনে নিরীহ প্রাণীর নিরাপত্তা সমান কথা। বর্তমানে দেশে অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই। আর বিএনপি চেয়ারপারসনকে ছাড়া বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মনে হয় অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে খুলনা-গাজীপুর মার্কা নির্বাচনকে বুঝিয়েছেন। যে নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র দখল করে জাল ভোটের মহোৎসব চলে, কেন্দ্রে শুধু আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডাররা থাকে, অন্য কোনো দলের এজেন্টকে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করে বা তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।