প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্বাচন প্রস্তুতি জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব

Slider টপ নিউজ সারাবিশ্ব

124190_f1
ঢাকা: একাদশ জাতীয় নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। ঢাকা সফরের প্রথম দিন রোববার সরকার প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী আসন্ন নির্বাচন প্রস্তুতির বিস্তারিত তুলে ধরেন।

আসন্ন নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে এবং এটি অবাধ, সুষ্ঠু পরিবেশে অনুষ্ঠান সম্ভব হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সরকারি সূত্রগুলো বলছে- বৈঠকে সরকার প্রধান বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জোটের অংশ না নেয়া এবং নির্বাচন ঠেকানোর ‘যড়যন্ত্রে’ দেশব্যাপী বিরোধীদের জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিশদ বর্ণনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম’র যৌথ ওই সাক্ষাৎ-বৈঠকে বিরোধীদের বাধা উপেক্ষা করে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের ফের সরকার গঠন এবং গত সাড়ে ৪ বছরে উন্নয়ন-অগ্রগতির ফিরিস্তিও তুলে ধরা হয়। সূত্রগুলো জানিয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ের আধঘণ্টার পূর্ব নির্ধারিত ওই সাক্ষাৎ-বৈঠকটি সোয়া এক ঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী হয়।
সেখানে রোহিঙ্গাদের সংকট, বিশেষত তাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় বিভিন্ন উদ্যোগ, প্রত্যাবাসনের আগ পর্যন্ত বাস্তুচ্যুতদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা এবং লাখো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তরে ওই এলাকার দ্রুত উন্নয়নে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ অন্যরা এটি অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে শুনেন। সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন কম, শুনেছেন বেশি। নির্বাচন বিষয়ে হাসতে হাসতে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীও হাসতে হাসতেই জবাব দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী একনাগাড়ে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের আগের পরিস্থিতিকে ফোকাস করেছেন। সেই সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটকে নির্বাচনে আনতে সরকারি দলের তরফে এবং ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী যেসব উদ্যোগ নিয়েছেন, তার বিস্তারিত বলেছেন। সরকারি উদ্যোগের বিপরীতে সেই সময়ে বিএনপি জোট ২০১৩ সালের শেষে এবং ’১৪ সালের শুরুর দিনগুলোতে এমনকি পরবর্তী বছরে (নির্বাচনের বছরপূর্তিতে) আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী যেসব নেতিবাচক কার্যক্রম চালিয়েছে তা তুলে ধরেন। সূত্র মতে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে সরকার প্রধানের দীর্ঘ বর্ণনার পর জাতিসংঘ মহাসচিবের সম্পূরক কোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এসডিজি বিষয়ক একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বৈঠক এবং অনুষ্ঠানে মহাসচিব দুটি বিষয়ে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তা হলো- বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। একটি শব্দে মহাসচিব এটাকে ‘মিরাকল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত: তিনি বাস্তুচ্যুতদের জন্য বর্ডার এবং হার্ট খুলে দিয়ে বাংলাদেশ যে মহানুভবতা দেখিয়েছে তার প্রশংসা করেছেন। মহাসচিবের ভাষায়- বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশেই তিনি বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। ঢাকায় পা রাখার পর থেকে বিদায়ের আগ পর্যন্ত অন্তত ৪টি অনুষ্ঠানে মহাসচিব এ বিষয়টি বলেছেন জানিয়ে সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন- গুতেরেস আগে শরণার্থী সংস্থার প্রধান ছিলেন। তিনি বলেছেন- বিশ্বে অনেক উন্নত দেশ যখন শরণার্থীদের জন্য দরজা বন্ধ করছে, উন্নয়নশীল রাষ্ট্র বাংলাদেশ তখন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তার সীমান্ত এবং হৃদয় উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এটি সত্যিই বিশ্বে অনন্য উদাহরণ। সংকটের টেকসই সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ ইস্যুতে বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশের পাশে থাকার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি মিয়ানমারের ওপর বিদ্যমান বৈশ্বিক চাপ আরো বাড়ানোর অঙ্গীকার করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। সূত্র জানায়- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কেবল অ্যান্তোনিও গুতেরেস নন, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং মানবিক সহায়তার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনিও বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বৈঠকের সমাপনীতে ১৯৭৪ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ দেয়ার একটি ছবি শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *