বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেছেন, ‘আমেরিকাতে সরাসরি ফ্লাইট চালু করতে আমিও আগ্রহী। তবে আমাদের বোয়িং ৭৭৭ বিমান যদি আমেরিকায় যায়, তাহলে ফিরে আসার জন্য যে পরিমাণ যাত্রী প্রয়োজন আমরা তা পাই না।
যাত্রী পাওয়ার জন্য সেখানে অর্থাৎ আমেরিকায় ৩-৪ দিন বসে থাকতে হয়। এজন্য আমাদের বিমানের ক্রুসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের আমেরিকাতেই থাকতে হয়। এতে অনেক খরচ ও লোকসান হয়। তাই আমরা ছোট অর্থাৎ দুই, আড়াইশ’ যাত্রী বহনযোগ্য বিমান কেনার পর আমেরিকাতে সরাসরি ফ্ল্যাইট চালু করার চেষ্টা করবো।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সোমবার সংসদের ২১তম অধিবেশনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, বিমান বন্দরে ল্যাগেজ পেতে দেরী হয় ঠিকই। এতদিন পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ চলছিল। আমরা নতুন যন্ত্রপাতি কেনার ব্যবস্থা করেছি। আশা করি ল্যাগেজ ডেলিভারিতে এখন আর দেরি হবে না।
তারপরেও যদি কেউ অভিযোগ করেন তার ল্যাগেজ হারিয়ে বা কাটা গেছে, তা হলে আমার কাছে অভিযোগ এলে আমি সেই কর্মকর্তা বা কর্মীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
বিমানে যাত্রী ও রাজস্ব কমে যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি সত্য নয় :
মো. মামুনুর রশিদ কিরণের (নোয়াখালী-৩) প্রশ্নের জবাবে বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিমানে যাত্রী পরিবহন ও রাজস্ব কমে যাওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি সত্য নয়। বিগত ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে যাত্রী পরিবহন ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায় এবং ২০১৬-১৭ সালের আগের অর্থবছর থেকে ৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ রাজস্ব হ্রাস পেয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো পূর্ববর্তী লোকসানে চললেও পর পর তিন বছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান ২৭২ দশমিক ২৩, ২৭৫ দশমিক ৯৯ ও ৪৬ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেন, বিমানের ২০১৬-১৭ অর্থ-বছরে বার্ষিক নিরীক্ষিত হিসাব অনুযায়ী এই প্রতিষ্ঠানের আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হয়েছে। এ হিসেবে গত অর্থবছরে বিমানের ৪৫৫১.৫২ কোটি টাকা আয়ের বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ৪৫০৪.৭৭ কোটি টাকা অর্থাৎ লাভের পরিমাণ ৪৬.৭৬ কোটি টাকা।
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর (সিলেট-৩) প্রশ্নের জবাবে বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী বলেন, বিমানকে আরও লাভজনক করার জন্য বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত করা হবে। বিমান বহর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ২০০৮ সালে ১০টি উড়োজাহাজ ক্রয় চুক্তি সম্পাদিত হয়। এরইমধ্যে ৪টি ৭৭৭-৩০০ইআর ২০১১ ও ২০১৪ সালে এবং ২টি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ২০১৫ সালে বিমান বহরে যুক্ত হয়েছে। অবশিষ্ট ৪টি ৭৮৭-৮ (ড্রিম লাইনার) উড়োজাহাজের মধ্যে ২টি উড়োজাহাজ চলতি আগস্ট ও নভেম্বর, অপর ২টি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বিমানের কাছে হস্তান্তরের জন্য নির্ধারিত রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য কানাডার উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বমব্রাডার ইনক- এর কাছ থেকে ৩টি ড্যাশ-৮কিউ৪০০ উড়োজাহাজ জি টু জি ভিত্তিতে কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
তিনি আরও জানান, ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি এবং সম্ভাব্য কিছু নতুন গন্তব্যে সার্ভিস স¤প্রসারণের লক্ষ্যে বিমান বহরে ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির জন্য ২০১৮ সালে ২টি ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ও একটি টারবো-প্রপ উড়োজাহাজ লিজ ভিত্তিতে সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে।