গ্রাম বাংলা ডেস্ক:
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণার বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে ড. কামাল হোসেনের দেয়া অভিমতের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করেছেন প্রবীণ আইনবিদ ও সাবেক এটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার রফিক-উল হক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির কথিত নির্বাচন আইনের চোখে কোন নির্বাচন নয়। এটা নির্বাচনের নামে তামাশা। এটা ইলেকশন নয়, সিলেকশন। সংবিধান এ ধরনের নির্বাচনের কথা বলেনি। সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে, সিলেকশনের কথা বলা হয়নি। এমিকাস কিউরি হিসেবে দাখিল করা লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এ অভিমত দেন। এর আগে প্রবীণ আইনবিদ ড. কামাল হোসেন ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মতামত দিয়েছিলেন। ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদের আলোকে বর্তমান ‘সংসদ’ সংসদ নয়। বদিউল আলম মজুমদার দশম সংসদ অবৈধ ঘোষণার অনুরোধ জানান। তবে এ মামলার আরেক এমিকাস কিউরি সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এরই মধ্যে শুনানিতে অংশ না নেয়ার কথা আদালতকে জানিয়েছেন। তার অপারগতা জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিট আবেদনকারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। আরেক এমিকাস কিউরি আজমালুল হোসেন কিউসি আদালতে লিখিত বক্তব্য দেবেন বলে জানিয়েছেন। পরে ১১ই জুন পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করে বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার এবং বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ। লিখিত বক্তব্যে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক আরও বলেন, এক আসনে একের বেশি প্রার্থী থাকবেন না এমন ধারণা আধুনিক গণতন্ত্রে ভাবা যায় না। এমনকি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারায়ও একাধিক প্রার্থীর কথা ভাবা হয়েছে। এ অবস্থায় সরকারও মধ্যবর্তী নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছে। আমি আশা করি শিগগিরই অর্থপূর্ণ, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। আমরা যা দেখছি তাতে রাজনৈতিক দলের অধীনে অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় এখনও আসেনি। এমনকি উপজেলা নির্বাচনেও সরকারি দল প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রধানমন্ত্রী সত্যিকার অর্থেই একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন চান, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নয়। আমি মনে করি আরও দু’টি নির্বাচন অন্তর্বর্তীকালীন অথবা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার বিধানের বৈধতা নিয়ে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস সালামের দায়ের করা রিট আবেদনে হাইকোর্ট ওই রুল জারি করে। রিট আবেদনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা অনুসারে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর বা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর একক প্রার্থী থাকলে তাকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা যায়। এক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের কোন বিধান রাখা হয়নি। অথচ সংবিধান স্পষ্ট বলছে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে সংসদ গঠিত হবে। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়া কাউকে নির্বাচিত ঘোষণা করা সংবিধানের পরিপন্থি। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা সংবিধানের ৭, ১১, ২৭, ৩১, ৬৫(২), ১২১ ও ১২২(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কতৃত্বে কার্যকর হইবে।’ সংবিধানের ৬৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একক আঞ্চলিক নির্বাচনী এলাকাসমূহ হইতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে আইনানুযায়ী নির্বাচিত তিন শত সদস্য লইয়া এবং এই অনুচ্ছেদের (৩) দফার কার্যকরতাকালে উক্ত দফায় বর্ণিত সদস্যদিগকে লইয়া সংসদ গঠিত হইবে; সদস্যগণ সংসদ-সদস্য বলিয়া অভিহিত হইবেন।’ ১২২(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার-ভিত্তিতে সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।’ ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশ-বিদেশে বিতর্ক চলছে। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় বলছে, নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের মতামতের সত্যিকার প্রতিফলন হয়নি।
পাঠকের মতামত