ইন্টারনেটের ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমানো, সিগারেটের শুল্ক-কর বাড়ানো, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ওপর ভ্যাট আরোপসহ বেশ কিছু সংশোধনী এনে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত অর্থবিল, ২০১৮ পাস করেছে জাতীয় সংসদ। গতকাল বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শক্রমে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব সংশোধনীর প্রস্তাব করলে সদস্যরা কণ্ঠভোটে তা পাস করেন।
গত ৭ জুন জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করা হয়। ওই সময়ই কোন কোন পণ্য ও সেবার ওপর আগামী অর্থবছরে কী হারে শুল্ক, কর, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ও আবগারি শুল্ক আরোপ হবে, তা উল্লেখ করে সংসদ সদস্যদের কাছে অর্থবিল উপস্থাপন করা হয়। প্রস্তাবিত বাজেট আজ বৃহস্পতিবার সংসদে পাস হওয়ার কথা রয়েছে।
ইন্টারনেটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব ছিল, এখন তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে কম্পিউটার যন্ত্রাংশকে। দেশীয় মোবাইল ফোন সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য দেশীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ অতিরিক্ত ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেছেন, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় কমদামের সিগারেটের প্রতি ১০ শলাকার সর্বনিম্ন মূল্য ৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা ও অতি উচ্চস্তরের ১০ শলাকার সর্বনিম্ন মূল্য ১০১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০৫ টাকা করা হয়েছে। জর্দা ও গুলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক-কর বহাল রেখে প্রতি গ্রাম জর্দার ট্যারিফ ভ্যালু এক টাকা ২০ পয়সা ও গুলের ৬০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে তামাকপণ্যের দাম বাড়তে পারে।
বিল পাসের সময় শীতের সময় ঠোঁট ও ত্বকে ব্যবহার করা পেট্রোলিয়াম জেলির ওপর প্রস্তাবিত সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এনার্জি বাল্বের দাম সাধারণের নাগালে আনতে এর ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে এসবের দাম কমতে পারে।
দেশে মোটরসাইকেল উৎপাদন উৎসাহিত করতে দেশীয় উৎপাদকদের ভ্যাট অব্যাহতির পাশাপাশি সংযোজন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ৭ শতাংশের অতিরিক্ত ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটের ক্ষেত্রে বন্দর সেবার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেছেন, সংশোধনীগুলো পাস হলে একটি ব্যবসায় ও করদাতাবান্ধব অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। ভ্যাট আহরণের প্রবৃদ্ধিও অব্যাহত থাকবে।
বিল পাসের আগে গুঁড়া দুধ আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ, ড্রাই মিক্সড ইনগ্রেডিয়েন্টের শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন শিল্পের মৌলিক কাঁচামাল ন্যাচারাল ব্যারিয়াম সালফেটের শুল্ক ১০ থেকে ৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। দেশে উৎপাদিত অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করেন।
এ ছাড়া হেপাটাইটিস ‘সি’ রোগের ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক আরোপ না করা, সিম কার্ড বা স্মার্ট কার্ডের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হার কমিয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন মন্ত্রী। ওষুধশিল্পের মোড়ক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক হার কমিয়ে ৫ শতাংশ, লিফ স্প্রিং আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ, সাড়ে ৭০০ ওয়াট ক্ষমতার মোটর তৈরি উৎসাহিত করতে আমদানিতে ৫ শতাংশ শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ও ৫ শতাংশ অগ্রিম ভ্যাট আরোপ করার প্রস্তাব করেন। টেলিভিশনের ওপেন সেল আমদানিতে পৃথক এইচএস কোড সৃষ্টি করে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়। ২,০০০ সিসি থেকে ৩,০০০ সিসি পর্যন্ত ডাবল কেবিন পিকআপ আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন মন্ত্রী।