নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে প্রথম স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ঘাতক স্বামী মাসুদ দেওয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (২৫ জুন) দুপুরে গ্রেফতারকৃতকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাহমুদুল মহসীনের আদালতে হাজির করা হলে আদালত শুনানী শেষে ৩ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের এসআই কামাল হোসেন রিমান্ড মঞ্জুরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে রবিবার কিলিং মিশনে থাকা গ্রেফতারকৃত চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেল নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আশেক ইমামের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে।
গ্রেফতারকৃত মাসুদ দেওয়ান চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ থানার দক্ষিণ শাশাআলী এলাকার খলিলুর রহমানের পুত্র। অপর গ্রেফতারকৃত চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেল নেত্রকোনার খালিয়াজুরী থানার ফতুয়া এলাকার স্বপন মিয়ার পুত্র।
নিহতরা হলো, মাসুদের স্ত্রী নোয়াখালীর সেনবাগের পদুয়া এলাকার সোলেমানের মেয়ে আঞ্জুবী আক্তার (২৮) ও তার দুই মেয়ে ৭ বছর বয়সী মাঈদা আক্তার ও ১৫ মাস বয়সী মাহি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (এসআই) রাসেল আহমেদ জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউসিং মসজিদ গলির কবির মিয়ার বাড়ির ৬ তলার পশ্চিম দক্ষিণ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় মাসুদ দেওয়ান। সে তার প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারের অমতে তারই বান্ধবী শোভা আক্তারকে বিয়ে করে। এই বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগেই ছিল। ওই ঝগড়ার জের ধরে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
ওই পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৯ জুন তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও চাচাতো শ্যালক মিলে প্রথমে আঞ্জুবী আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে বড় মেয়ে মাঈদা ও ছোট মেয়ে মাহিকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর তাদের লাশ বস্তায় ভরে সিদ্ধিরগঞ্জের একটি নির্জন স্থানে ও একটি পুকুরে ফেলে দেয়া হয়।
গত ১১ জুন বিকাল ৫টায় সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকার ডিএনডি ইরিগেশন খালের পাশ থেকে ড্রামের মধ্যে আঞ্জুবী আক্তারের (২৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর গত ১৬ জুন ঈদের দিন আটি হাউজিংয়ের আলী মোহাম্মদের মাছের খামারে ভাসতে থাকা বস্তাবন্দী অবস্থায় ১৫ মাস বয়সী শিশু মাহির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুন আটি এলাকার একই খামারে ভাসতে থাকা একটি ব্যাগ থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় শিশু মাহিদার (৭) লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে ঘাতক স্বামী মাসুদ দেওয়ান ও চাচাতো শ্যালক সবুজ ওরফে সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে সবুজ ওরফে সোহেল আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। ঘাতক স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তবে পলাতক রয়েছে দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) আব্দুস সাত্তার জানান, মাসুদ দেওয়ানের দ্বিতীয় স্ত্রী শোভাকেও গ্রেফতার আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।