মো: আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন, উত্তরা প্রতিনিধি : কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে গোপনে যোগসাজশ করে রাজধানীর মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে ইয়াবার চালান পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাও চালকদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল এমরানুল হাসান।
শনিবার দিনগত রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানাধীন ১২নং সেক্টরের ১৮নং সড়কের ১১নং বাসায় অভিযান চালিয়ে পাঠাও চালকসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩ এর একটি টিম। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা, ৮টি মোবাইল ও একটি মোটরসাইকেল উদ্বার করে র্যাব।
গ্রেফতাররা হলেন- কক্সবাজারের মাদক ব্যবসায়ী মো. ইফতেখারুল ইসলাম (২৫), ওই ভবনের কেয়ারটেকার ও উখিয়ার বাসিন্দা মো. অলি আহম্মেদ (২৪), ওষুধ কোম্পানির ইনফরমেশন অফিসার মোস্তফা কামাল এবং পাঠাও চালক মো. রানা আহম্মেদ ওরফে রাজু (২৫)। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান র্যাবের আইন ও গনমাধ্যম শাখার সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মো: মিজানুর রহমান ভুঁইয়া আজ রোববার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারস্থ র্যাব মিডিয়া সেন্টারে র্যাবের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান সাংবাদিকদেরকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ঢাকার মাদক ব্যবসায়ীরা ইয়াবার চালান আনতে কক্সবাজার যাওয়ার ক্ষেত্রে ভীতির মধ্যে রয়েছে। আগের তুলেনায় ইয়াবা পরিবহনে ঢাকার মাদক ব্যবসায়ী ও ক্যারিয়ারদের (বাহক) চলাচল সীমিত হয়েছে। তবে আমাদের কাছে সম্প্রতি তথ্য আসে কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী কক্সবাজারের উখিয়া থেকে মাদকের একটি বড় চালান ঢাকার উত্তরায় মজুত করা হয়েছে। ওই তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ইয়াবাসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়। লেফটেন্ট্যান্ট কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, ইফতেখারুল ইসলাম মাদক ব্যবসায় জড়ানোর পাশাপাশি কক্সবাজারের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে স্থানীয় যুবক ও রোহিঙ্গাদের ঢাকায় ইয়াবা নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করে। কক্সবাজার থেকে বহন করে ইয়াবা অবৈধভাবে ঢাকার উত্তরা নিয়ে এসে আশাপাশের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করার কাজ নিয়ন্ত্রণ করত সে। লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, কক্সবাজারের ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সাথে ঢাকার কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর যোগসাজশের তথ্য আমরা পেয়েছি। তাদের নামও জেনেছি। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তিনি আরও বলেন, পাঠাও চালকদের কয়েকজনের তথ্য আমরা পেয়েছি। অভিযুক্ত কয়েকজন চালকের ব্যাপারে তথ্য পেতে আমরা পাঠাওয়ের সাথে যোগযোগ করব। মাদক পরিবহনে পাঠাও চালক ও রোহিঙ্গা নাগরিকদের ব্যবহারের তথ্য পাওয়া-সংক্রান্ত মামলাটি র্যাব-৩ তদন্ত করবে।
র্যাবের হাতে গ্রেফতার ইফতেখারুল ইসলাম জানান, কক্সবাজারের উখিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বিএসএস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত উখিয়ার স্থানীয় কিছু যুবকের বিলাসবহুল জীবনযাপন দেখে তিনি ইয়াবা ব্যবসায় উদ্বুদ্ধ হয়। তার ধারণা ইয়াবা ব্যবসায় দ্রুত লাভবান ও বিলাসবহুল জীবনযাপন করা যায়।
গ্রেফতারকৃত অলি আহম্মেদ জানান, তার বাড়িও কক্সবাজারের উখিয়া থানার রাজাপালং গ্রামে। উত্তরার ফজিলত প্রোপার্টিজ নামে একটি নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্ব পালন করেন। নিজের নিয়ন্ত্রিত ওই ভবনে কক্সবাজারের ইয়াবা রাখা হতো এবং তার সহায়তায় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে যেত। গ্রেফতার মোস্তফা কামাল জানান, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা শরীফ ফার্মাসিউটিক্যালসের মেডিকেল ইনফরমেশন অফিসার হিসেবে চাকরি করেন। মোটা অঙ্কের টাকার লোভে উষধ বিপণন ও সরবরাহের সাথে যুক্ত থাকার পাশাপাশি ইয়াবা পরিবহনের কাজেও যুক্ত হয়ে পড়েন। কক্সবাজার থেকে ইয়াবা ঢাকায় একটি চালান পৌঁছাতে পারলে তিনি ২০ হাজার টাকা পেতেন। র্যাবের হাতে গ্রেফতার রানা আহম্মেদ ওরফে রাজু মূলত রাইড শেয়ারিং অ্যাপস পাঠাও-এর একজন রাইডার। তিনি পাঠাওয়ের রাইড শেয়ার দেওয়ার পাশাপাশি ইয়াবা পরিবহন করে কাংখিত মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দিত বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল এমরানুল হাসান । এব্যাপারে ধৃত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্বে প্রয়োজনীয় আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব-৩।