গাজীপুর: গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ২০ দলীয় জোট মেয়র পদপ্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার বলেছেন, গত ২০ জুন নির্বাচন কমিশন ও তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসন প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন নির্বাচনী মাঠে তার বা¯Íবায়ন হচ্ছে না। বরং খুলনা স্টাইলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ ২০ দলীয় জোট নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার ও হুমকি-ধমকি দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বানচাল করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে ২০ দলীয় জোটের ৭৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আওয়ামীলীগের মেয়রপ্রার্থীকেও পুলিশের গাড়িতে দেখা যাচ্ছে। খুলনার কারচুপির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পুলিশ সদস্যদের ইতিমধ্যে গাজীপুরের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য আনা হয়েছে। কিন্তু শত বাধা সত্বেও আমরা নির্বাচনে আছি এবং শেষ পর্যন্ত থাকবো। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের নোংরা চরিত্র জাতির সামনে তুলে ধরবো।
হাসান সরকার রোববার টঙ্গী থানা বিএনপি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। তিনি আওয়ামীলীগের গোপন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেন, বাহির থেকে সিল মেরে ভেতরে ঢুকানো হবে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের পুলিশ দিয়ে আটকে রেখে জোরপূর্বক তাদের বানানো রেজান্ট শীটে স্বাÿর নেয়া হবে। যতÿণ পর্যন্ত স্বাÿর না দিবে ততÿণ পর্যন্ত এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের হতে দেবে না। খুলনার মত কারচুপি যাতে ধরা না পড়ে সেজন্য ইতিমধ্যে তারা একটি সুবিন্যাত রেজাল্ট শীট তৈরি করে রেখেছে। তাদের দলীয় ৫০ জন কাউন্সিলরকেও চূড়ান্ত করে রেখেছে।
হাসান সরকার ঝড়-বৃষ্টি ও সকল বাধা উপেÿা করে ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, আমরা আওয়ামীলীগের সকল অপকৌশল জেনে গেছি। আমরা তাদের এসব অপকৌশল প্রতিহত করার চেষ্টা করবো। তিনি মঙ্গলবার সকাল ৭টার মধ্যে ধানের শীষ প্রতীকের সকল এজেন্টকে ভোট কেন্দ্রে নির্বিঘেœ আসার আহবান জানান এবং কেন্দ্র পাহাড়া দেওয়ার জন্য ২০ দলীয় জোটের সকল নেতাকর্মীকে কেন্দ্রের পাশে অবস্থান নেওয়ার অনুরোধ জানান।
হাসান সরকার বলেন, আওয়ামীলীগ মুক্তিযোদ্ধের চেতনার কথা বলে। কিন্তু বা¯Íবে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কতটুকু সম্মান করে ? এই নির্বাচনে আমি হয়তো শেষ মুক্তিযোদ্ধা হবো। আগামীতে হয়তো আর কোন মুক্তিযোদ্ধাকে আপনারা নির্বাচনে পাবেন না। তাই সকল মুক্তিযোদ্ধাকে আমার পÿে ভূমিকা রাখার আহবান জানাই।
তিনি বলেন, সুনামের সাথে বেঁচে থাকতে চাই। মানুষের ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই না। জীবনের এই শেষ নির্বাচনে জীবন দিয়ে হলেও গাজীপুরবাসীর ইজ্জত রÿা করবো। তিনি সাংবাদিকদের সঠিক চিত্র তুলে ধরার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, মহান আলøাহ্র পরে আপনারা আমাদের ভরসা। আপনারা সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারলে এবং ন্যুনতম সুষ্ঠু ভোট হলে সম্মানজনক ভোটে বিজয়ী হবো।
তিনি ভোটারদের প্রতি আস্থা রেখে বলেন, শত উস্কানি ও উৎপীড়নের মধ্যেও ভোটাররা স্বত:স্ফূর্তভাবে ভোট কেন্দ্রে আসবে বলে আমি বিশ^াস করি।
হাসান সরকার বলেন, আমাদের দলীয় এই কার্যালয়টি এ পর্যন্ত চারবার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে দলীয় কার্যালয়ে বসতে দেয়া হয় না। তাই আমরা বাড়িতে বসে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করি।
তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছে। নির্বাচন পর্যন্ত এলাকায় না থাকতে হুমকি দিচ্ছে। এমনকি একজন নেতার মেডিকেলপড়–য়া মেয়েকেও বাড়িতে গিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছে। এতে সে মানসিকভাবে বিপর্য¯Í হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, দেশে নেক্কারজনক রাজনীতি চলছে। আমাদের একজন পেরালাইজড নেতাকেও তুলে নেয়া হয়েছে। ওমর ফারুক নামের ওই নেতাকে এখন কোথায় রাখা হয়েছে তা জানানো হচ্ছে না। আটক করেই ভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকা, টাঙ্গাইল ও নারায়ণগঞ্জের জেল খানায় কয়েকজনের সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। অনেকের এখনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। শনিবার রাতে বাসনের স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির গেট ভেঙ্গে পুলিশ ভেতরে প্রবেশ করে। এসময় তাকে না পেয়ে তার ম্যানেজারকে বলে আসে, ‘আগামীকাল আওয়ামীলীগ মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীরের সাথে দেখা করতে বলবি, আর দেখা না করলে নির্বাচন দিন পর্যন্ত বাড়ি থেকে যেন বাহির না হয়।’
সার্বÿনিক গোয়েন্দা তৎপরতার সমালোচনা করে হাসান সরকার বলেন, আমি কাপুরুষ নেতা নই। আমার এখানে গোপন কিছু নেই। আমি কলকাতা হোটেলে গিয়ে ঘুরাঘুরির মুক্তিযোদ্ধা নই। আমি প্রশিÿণ গ্রহণ করে এবং প্রশিÿণ দিয়ে দেশে এসে শত্রæর মোকাবেলা করেছি। আমি অন্যায়ভাবে নির্বাচিত হওয়া প্রত্যাশা করতে পারি না। বাংলাদেশে যে কয় জনের অধিক নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমি তাদের থেকে কম নই।
তিনি বলেন , আমি এ যাবত যথাযথভাবে আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছি।
আপরদিকে আওয়ামীলীগ আচরণবিধির কোন তোয়াক্কা করছে না। তাদের মন্ত্রী-এমপিরাও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকায় অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পÿে খুলনার বিতর্কিত ভোটের মেয়রসহ কেন্দ্রীয় নেতাদেরকেও আজকে (রোববার) প্রচারণা করতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, খুলনার ওই মেয়র এখনো গাজীপুরে অবস্থানের মধ্যে গভীর রহস্য নিহীত। তাকে ভোট কারচুপির প্রশিÿণের জন্য এখনো গাজীপুরে রাখা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, টঙ্গী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম শুক্কুর, জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন, জেলা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ন সম্পাদক মুফতি নাসির উদ্দিন প্রমুখ।
এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষে হাসান উদ্দিন সরকার গাজীপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেন এবং গ্রেফতারকৃতদের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখার জন্য দলের দায়িত্বশীল নেকাদের নির্দেশনা দেন। বিকেলে হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গীর ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে সর্বশেষ প্রচারণায় অংশ নেন। হাসান সরকার এসময় অভিযোগ করে বলেন, কাশিমপুরের ৫ ননম্বর ওয়ার্ডে আবির হোসেন নামের এক কর্মীকে আওয়ামীলীগ ক্যাডাররা মারধর করে ধানের শীষ প্রতীকের লিফলেট ছিনিয়ে নিয়েছে এবং জোরপূর্বক তার গলায় নৌকার ব্যাজ ঝুলিয়ে ছবি তুলেছে। এছাড়া গাজীপুরের ৫টি সিনেমা হল কতৃপÿকে জোরপূর্বক বাধ্য করে তাদের পর্দায় আহসান উলøাহ মাস্টার হত্যাকান্ডকে পুঁজি করে হাসান সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
মিডিয়া সেল