আমরা ভোট চুরির বদনাম নিতে চাই না——-সাংসদদের শেখ হাসিনা

Slider টপ নিউজ

2e09656740c032f9f258e6a070f71a40-5b2e49888fb68

ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনে জনগণ ভোট দেবে। ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি করে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে পারবে না। নির্বাচন যেন স্বচ্ছ হয়, কেউ যেন নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে না পারেন। আমরা ভোটচুরির বদনাম নিতে চাই না। জনগণের মন জয় করে তাদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আজ শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ খুবই হিসাবি। কেউ দুর্নীতি করলে তারা তা ভুলে যায় না। মানুষের চোখ খুলে গেছে। সময় খুব বেশি নেই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে দলকে বদনামে ফেলবে, এটা কোনোমতেই মেনে নেওয়া হবে না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। সরকারের উন্নয়নের কাজগুলোর কথা না বলে কোথায় কার বিরুদ্ধে কী দোষ আছে, সেটা খুঁজে জনগণকে যারা বলবেন—তারা কখনো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না। তিনি বলেন, ‘একটি বিষয় লক্ষ করছি, কেউ কেউ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রার্থী হয়ে গেছেন। প্রার্থী হয়ে তারা বিএনপির লুটপাট-সন্ত্রাসের কথা বলেন না। তাদের বক্তব্যে এসে যায় আমার আওয়ামী লীগের এমপির বিরুদ্ধে, সংগঠনের বিরুদ্ধে।’

জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রার্থী হওয়ার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু প্রার্থী হতে গিয়ে দলকে বদনামে ফেলবে, এটা কোনোমতেই মেনে নেওয়া হবে না। এটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। সরকারের উন্নয়নের কাজগুলোর কথা না বলে কোথায় কার বিরুদ্ধে কী দোষ আছে, সেটা খুঁজে জনগণকে যারা বলবেন—তারা কখনো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাবেন না। এটা পরিষ্কার কথা। তিনি বলেন, ‘আমি এগুলো কিন্তু রেকর্ড করছি। যারা দলের বিরুদ্ধে বদনাম করবে সে কী বোঝে না যে, এতে তার ভোটও নষ্ট হবে। ১০ বছর সরকারে থাকার পর যদি কেউ দলের বিরুদ্ধে বদনাম করে, তাহলে জনগণ তো তাকেও ভোট দেবে না। এটা হলো বাস্তবতা।’

এ সময় দলের সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, দেশের জনগণ কিন্তু খুবই হিসাবি। কেউ দুর্নীতি করলে তারা তা ভুলে যায় না। কাজ করতে গিয়ে টাকা দেবে আর ভোট চাইতে গেলে বলবে টাকা দিয়ে কাজ নিছি ভোট দেব কেন? জনগণের চোখ কিন্তু খুলে গেছে। সময় খুব বেশি নেই। পুরোনো কেউ নমিনেশন পাবেন কিনা তা নির্ভর করবে আপনার এলাকায় কতটুকু জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারলেন আর কতটুকু তৃণমূলকে মূল্যায়ন করলেন, তার ওপর। কাজেই বলব দুঃসময়ের যারা নেতা-কর্মী, যারা দুঃসময়ে দলের হাল ধরে রাখে, তারা যেন অবহেলিত না হয়।’

তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কে প্রার্থী সেটা বড় কথা নয়, নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে জনগণের কাছে যেতে হবে। নির্বাচনে যাকে প্রার্থী মনোনয়ন করা হবে, নৌকা মার্কা দেওয়া হবে, তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে। এ জন্য এখন থেকে জনগণের কাছে যেতে হবে। নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হবে। দলের মধ্যে ঐক্য রাখতে হবে, ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, সরকার যে উন্নয়ন করেছে, তাতে মানুষ নৌকায় ভোট দেবে না; তা হতে পারে না। যদি না দেয়, সে জন্য তৃণমূলের নেতারা দায়ী থাকবেন। কারণ তৃণমূলের নেতারা সঠিকভাবে মানুষের কাছে যেতে পারেননি। তাদের কাছে সরকারের উন্নয়নের কথা বলতে পারেননি। তাদের বোঝাতে পারেননি। আওয়ামী লীগ যে কাজ করেছে, তা অন্য দল করেনি। তাহলে কেন অন্য দল ভোট পাবে?

আগামী নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে নির্বাচন। নির্বাচন মানেই তা চ্যালেঞ্জিং হবে। এটা কিন্তু আমাদের জন্য একটানা তৃতীয়বার। এই তৃতীয়বারের নির্বাচনে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

দলে অনুপ্রবেশের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় থাকার কারণে বিভিন্ন দল থেকে আমাদের দলে ছুটে আসছে। আর গ্রুপ করার জন্য বাছ-বিছার না করে যাকে পাচ্ছে তাকে নিয়ে নিজের শক্তি দেখাতে চান। এরা আসে মধু খেতে, এরা আপনার সঙ্গে থাকতে আসে না। কাজ করতে আসে না। এ ছাড়া যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে, সন্ত্রাস করে মামলার আসামি হয়েছে, সেই মামলা থেকে বাঁচতে আসছে। আর একটি অংশ আসছে ক্ষমতার কাছে থেকে পয়সা কামাতে।’

অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি সারা দেশে সার্ভে করে বের করেছি। কাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। তাদের মধ্যে কারা আমার দলের—সেই তালিকা আমার কাছে রয়েছে। কাজেই বলব, কেউ যদি তাদের প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন, এখনই বিদায় করেন। কারণ তারা দুঃসময়ে থাকবে না। অনেকে এসে দলে কোন্দল করে, খুনখারাবি করে। এসব বিষয়ে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। দলের লোক আপন নয়, বাইরের লোক আপন হয়ে গেছে—এটা মনে করার কোনো ‍সুযোগ নেই। তারা কিন্তু আপন হবে না। নিজের লোকদের চিনতে হবে।’

দলীয় জোটের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জোট করেছি, মহাজোট করেছি। দলের স্বার্থে এটা করতে হয়েছে। ভবিষ্যতেও আমরা এটা করব। আমরা বন্ধু হারাব না। সবাইকে নিয়েই থাকতে চাই। এ জন্য যতটুকু আত্মত্যাগ করতে হবে, তা করব। বড় দল হিসেবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বটা এ ক্ষেত্রে বেশি।’

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জুয়া খেলে অর্থ উপার্জন করে, সেই জুয়াড়ি, মাদকসেবী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারা কেন ভোট পাবে? সেই দল কেন ভোট পাবে? বিএনপি-জামায়াত, যুদ্ধাপরাধীরা যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে এই দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আওয়ামী লীগ যে উন্নয়ন করেছে, তা থেকে পিছিয়ে লুটপাট করে খাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *