ঈদ সামনে রেখে বাগমারার সন্দেহভাজন ৩১ জঙ্গি পুলিশের নজরদারিতে

Slider রাজশাহী

8adf841dffaf181bf8e934bda4e911c0-5afb96eb8335b

রাজশাহী: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী তৎপরতায় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা থেকে দুই বছর আগে গ্রেপ্তার হন প্রায় অর্ধশত সন্দেহভাজন জঙ্গি। এর মধ্যে ৩১ জন প্রায় দেড় বছর কারাগারে বন্দী থাকার পর উচ্চ আদালতের জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। পুলিশের ভাষ্য অনুসারে, জামিনে মুক্ত ৩১ জন এখন এলাকাতেই রয়েছেন। আর তাই তো ঈদুল ফিতর সামনে রেখে নাশকতার ঘটনা এড়াতে ওই ৩১ জনের ওপর কড়া নজরদারি রেখেছে পুলিশ।

বাগমারা থানার পুলিশ জানিয়েছে, আর দুই-তিন পরই ঈদুল ফিতর। ঈদ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরমুখী মানুষ আসতে শুরু করেছেন এলাকায়। এই অবস্থায় ঈদ সামনে রেখে নাশকতার কোনো ঘটনাই যেন জঙ্গিরা ঘটাতে না পারেন, এ কারণে সতর্ক রয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। থানায় নিয়মিত সাপ্তাহিক হাজিরা নেওয়া হচ্ছে ওই ৩১ জনের।

রাজশাহী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) তিনজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) ও জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশের (জেএমজেবি) তালিকাভুক্ত সদস্য এবং সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলার আসামি। এর আগেও তাঁরা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তাঁরা পুনরায় যাতে কোনো জঙ্গি তৎপরতা এবং নাশকতায় জড়াতে না পারেন, এ জন্য থানার পুলিশ নিয়মিত সাপ্তাহিক হাজিরা নেওয়া শুরু করেছে। জামিনে আসা এসব ‘জঙ্গি’র ওপর তাদের নজরদারি রয়েছে। এর আগেও তাঁরা জামিনে এসে জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়েছিলেন। তাঁদের বিষয়ে নিয়মিত গোপন প্রতিবেদনও দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি ইব্রাহিম হোসেন বলেন, জজ আদালত থেকে কোনো জঙ্গির জামিন হয়নি। তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন।

আদালত ও জেলা পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে বাগমারা থানার পুলিশ জঙ্গি তৎপরতা এবং নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। ওই বছরের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৪২ জন তালিকাভুক্ত ‘জঙ্গি’কে পুলিশ আটক করে। এর আগেও তাঁরা একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে বাংলা ভাইয়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড আবদুস সাত্তার, জেএমবির শীর্ষ নেতা মাহাতাব খামারু, বাংলা ভাইয়ের সহযোগী গোলাম কিবরিয়া, ভাটা আকবর, কলিম উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম রয়েছেন। তবে ভয়ংকর জঙ্গি বাংলা ভাইয়ের উপদেষ্টা লুৎফর রহমানকে ধরতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে জিহাদি বই, বিস্ফোরকদ্রব্য ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়। এই সময়ে তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে পৃথক দুটি মামলা করে পুলিশ।

বাগমারা থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুন থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় ৩৬ জন এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলায় ১১ জন তালিকাভুক্ত ‘জঙ্গি’কে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি বগুড়া ও রাজশাহীর অন্য উপজেলায়।

আদালত ও বাগমারা থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর কারাবাসের পর এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ‘জঙ্গি’রা জামিনে মুক্তি পেতে শুরু করেন। বিভিন্ন সময়ে তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে এলাকায় আসেন। গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত উপজেলার ৩১ জন ‘জঙ্গি’ জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা এলাকাতেই অবস্থান করছেন।

জামিনে আসা এসব ‘জঙ্গি’র স্বজনেরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নিম্ন আদালতে জামিন না হওয়ায় তাঁরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনের মাধ্যমে কারাবন্দী ওই স্বজনদের ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল না করায় জামিনে সময় লেগেছে বলে জানিয়েছেন।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ বলেন, উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আসা তালিকাভুক্ত ৩১ জঙ্গির নিয়মিত হাজিরা নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা ছাড়াও তালিকাভুক্ত অন্য জঙ্গিদের প্রতিও নজরদারি রয়েছে। তাঁরা যাতে কোনো নাশকতা ঘটাতে না পারে, সেদিকে পুলিশ নজর রেখেছে। ঈদ সামনে রেখে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।

ঈদে এলাকায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কা রয়েছে কি না, তা জানতে চাইলে ওসি নাছিম আহম্মেদ বলেন, আশঙ্কা নেই, তবে সতর্কতা রাখা হয়েছে। লোকজন যাতে নির্বিঘ্নে ঈদ উদ্‌যাপন করতে পারে, সেদিকে কড়া নজর রেখেছে পুলিশ।

ওসি জানান, থানার পুলিশ এসব জঙ্গির জন্য সাপ্তাহিক হাজিরার ব্যবস্থা করেছে। প্রতি সপ্তাহে তাঁরা থানায় এসে হাজিরা দেওয়া ছাড়াও এই সময়ের মধ্যে কোথায় অবস্থান করেছেন, সে বিষয়েও পুলিশকে জানান তাঁরা। অন্যদিকে, তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাতেও আদালতে নিয়মিত হাজিরা অব্যাহত রেখেছেন।

জামিনে আসা সাতজন ‘জঙ্গি’ নিজেদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁরা ওসির নির্দেশ মোতাবেক প্রতি সপ্তাহে থানায় এবং মামলার নির্ধারিত দিনে আদালতে গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসছেন। নিজেদের নাম পুলিশের জঙ্গি তালিকায় থাকার কথা স্বীকার করে বলেছেন, তাঁরা কোনো নাশকতা বা জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

দীর্ঘদিন র‌্যাব-৫-এর জঙ্গি সেলের দায়িত্বে থাকা অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ড. মির্জা গোলাম সারোয়ার পিপিএম বলেন, জামিনে থাকা এসব ‘জঙ্গি’র ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। তাঁরা যাতে পুনরায় সংগঠিত হয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়েন, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *