স্কুলের প্রেমই ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ বানায় পাপিয়াকে

Slider বিচিত্র

papia-1

সুন্দরী যুবতী। নাম ফারহানা আক্তার পাপিয়া। বয়স মাত্র ২৫ বছর। তাকে দেখে কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই, সুন্দর চেহারার অধিকারী পাপিয়া মাদক সম্রাজ্ঞী। কেউ বিশ্বাসই করবে না সে ঢাকার তালিকাভুক্ত মাদক সম্রাজ্ঞীদের মধ্যে অন্যতম একজন।

সারা দেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকেই যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পরিশেষে পুরান ঢাকার লালবাগ থেকে মাদক ব্যবসায়ী স্বামীসহ সেই ফারহানা আক্তার পাপিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ তকমা পাওয়া পাপিয়ার জন্য যদিও জেল খাটার অভ্যাস নতুন নয়। এর আগেও অনেকবার গ্রেফতার হয়েছেন পাপিয়া। তবে যত বারই তাকে আটক করা হয়েছে, তত বারই প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কিছুদিন কারাভোগের পর আবারো ফিরে এসে জড়িয়েছেন পড়েছেন ‘মাদক ব্যবসায়’।

জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আজিজ মহল্লার আবু হানিফের মেয়ে এই ফারহানা আক্তার পাপিয়া। তিনি বেড়ে ওঠেন ওই আজিজ মহল্লার জয়েন্ট কোয়ার্টারে। হাইস্কুলে পড়াশোনা করার সময়ই মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পের মাদক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন ওরফে পাঁচুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন পাপিয়া। অনেকদিন প্রেম করার পর পাঁচুর সঙ্গেই বিয়ে হয় মাদক সম্রাজ্ঞী পাপিয়ার।

বিয়ে পর পাঁচুর সঙ্গে তার জেনেভা ক্যাম্পের বাসায় ওঠেন পাপিয়া। এর কিছুদিন পরই পাপিয়াকে মাদক ব্যবসায় সাহায্য করার প্রস্তাব দেন স্বামী পাঁচু। নারী বলে তাকে কেউ সন্দেহ করবে না এবং খুব সহজেই তার মাধ্যমে এই ব্যবসার বিস্তার ঘটানো সম্ভব হবে এমন চিন্তা করেই তাকে ব্যবসা ব্যবসায় আনেন স্বামী জয়নাল আবেদিন ওরফে পাঁচু। পাপিয়া অল্প কিছু দিনের মধ্যেই মাদক ব্যবসায় দক্ষ ও পারদর্শী হয়ে ওঠেন। ব্যবসার বিস্তার ঘটাতে নিজের রুপ-লাবণ্য, যৌবনও কাজে লাগান তিনি। হেরোইন-গাঁজার পাশাপাশি শুরু করেন ইয়াবার ব্যবসাও।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিতে মাদক ব্যবসায় আরো বেশ কয়েকজন সুন্দরী নারীকে যুক্ত করেন পাপিয়া। একটি পর্যায় গিয়ে তিনি নিজেই ওই ব্যবসার হাল ধরেন এবং গড়ে তোলেন ‘পাপিয়া সিন্ডিকেট’। এরপরই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরসহ বিভিন্ন তালিকায় শীর্ষ মাদক সম্রাজ্ঞী হিসেবে পাপিয়ার নাম উঠে আসে।

খুব অল্প সময়ে মধ্যে মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন পাপিয়া। শুধু মাদক নয়, অবৈধ অস্ত্রের সমাহারও রয়েছে মাদক সম্রাজ্ঞী তকমা পাওয়া এই নারীর কাছে।

জানা যায়, মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, ইকবাল রোড, পুরান থানা রোড, জহুরি মহল্লা, জয়েন্ট কোয়ার্টার, টিক্কাপাড়া, কৃষি মার্কেট, পাকা ক্যাম্প, পিসিকালচার ও শেখেরটেকের মানুষ এক রকম জিম্মি হয়ে ছিল পাপিয়ার অস্ত্রধারী বাহিনীর কাছে। তার সিন্ডিকেট ওই সব এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করে আসছিল।

অবশেষে বৃহস্পতিবার (৭ জুন) রাতে রাজধানীর লালবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে জেনেভা ক্যাম্পের সেই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন ওরফে পাঁচু ও তার স্ত্রী ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ ফারহানা আক্তার পাপিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান শুক্রবার (৮ জুন) দুপুরে জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে মাদক ব্যবসায়ী পাঁচু ও তার স্ত্রী মাদক সম্রাজ্ঞী পাপিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার পিস ইয়াবা, ১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৫ রাউন্ড গুলি ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়।

তিনি আরো জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পাঁচু ও তার স্ত্রী পাপিয়া। তাদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর ও মতিঝিলসহ বেশ কয়েকটি থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে বেশকিছু মামলা রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *