বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধের আহবান জাতিসংঘ মানবাধিকার প্রধানের

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

120805_Zeid-Ra’ad-Al-Hussein

ঢাকা:বাংলাদেশে সন্দেহভাজন মাদক অপরাধীদেরকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জেইদ রাদ আল হোসেন। বুধবার এক বিবৃতিতিতে তিনি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের প্রতি এই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন অবিলম্বে বন্ধ করা ও দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহবান জানান।

১৫ই মে থেকে শুরু হওয়া এই মাদক-বিরোধী অভিযানে ১৩০ জনের মতো মানুষ নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ১৩ হাজার জন। দেশে মাদক গ্রহণের হার বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণা করেছে। এরপর থেকেই এই হত্যাকা- শুরু হয়।

জেইদ রাদ আল হোসেন বলেন, ‘এত বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় আমি ভীষণ উদ্বিগ্ন। এসবের প্রতিক্রিয়ায় সরকার কেবল জনগণকে আশ্বস্ত করেছে এই বলে যে, নিহত ব্যক্তিবিশেষের কেউই নির্দোষ নয় এবং মাদক-বিরোধী অভিযানে কিছু ভুল ভ্রান্তি হতেই পারে।’
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান আরও বলেন, ‘এই ধরণের বক্তব্য খুবই বিপজ্জনক এবং আইনের শাসনের প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রদর্শনের ইঙ্গিতবাহী।

প্রত্যেক মানুষের জীবনের অধিকার রয়েছে। মাদক গ্রহণ বা বিক্রি করলেই কারও মানবাধিকার বিলুপ্ত হয়ে যায় না। কারও অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার আগে তাকে নির্দোষ ধরে নেওয়া এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় তার বিচার পাওয়ার অধিকারকে যেকোনো অপরাধ মোকাবেলার প্রচেষ্টায় সর্বাগ্রে স্থান দিতে হবে।’

তিনি যোগ করেন, ‘বিপুল সংখ্যক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফলে এমন সম্ভাবনাই বেশি যে, এদের অনেককেই বাছবিচারহীনভাবে আটক করা হয়েছে এবং তাদের অধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হয়নি।’

বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-ের অভিযোগ তদন্ত করতে সরকারের প্রতি আহবান জানান হাই কমিশনার জেইদ। মাদক নিয়ন্ত্রণের নামে মানবাধিকার লঙ্ঘণকারীরা যাতে দায়মুক্তি ভোগ করতে না পারে, তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

গত সপ্তাহে জেনেভায় এক বৈঠকে বাংলাদেশ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এসব অভিযোগ তদন্ত করা ও দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ উদ্ধৃত করে হাই কমিশনার জেইদ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ওই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আহবান জানান। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই তদন্ত হতে হবে স্বাধীন, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও কার্যকরী।

এই মাদকবিরোধী অভিযানে বস্তিবাসী অসহায় মানুষজনকে বিশেষভাবে টার্গেট করা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, অবৈধ মাদক পাচার ও বিক্রির কারণে ব্যক্তিবিশেষ ও এলাকাবাসীকে অনেক দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, বাছবিচারহীনভাবে আটক ও মাদক ব্যবহারকারীদেরকে কলঙ্কিত হিসেবে উপস্থাপন করাটা কোনো সমাধান হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে একটি জাতীয় মাদক নীতিমালা প্রনয়ণের আহবান জানাই, যেটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও মাদক সম্পর্কিত সনদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। যেসব মানুষ মাদক ব্যবহার করেন তাদের স্বাস্থ্যের প্রতিও পূর্ণ শ্রদ্ধা যেখানে নিশ্চিত করা হবে।’

১৪ই মে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের সামনে সার্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনা প্রতিবেদন পেশ করে বাংলাদেশ। এসময় বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, বাছবিচারহীনভাবে গ্রেপ্তার ও অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘণের অভিযোগ তদন্তের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *