সরদার আজমুনকে পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে লিভারপুল, এসি মিলান। রাশিয়ান ক্লাব রোস্তভের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগেই নিজের ঝলক দেখিয়েছেন এই ইরানিয়ান। ২০১৬-১৭ মৌসুমে গ্রুপ পর্বে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-২ গোলে হারায় রোস্তভ। সেই ম্যাচের অন্যতম সেরা পারফরমার ছিলেন আজমুন। ডগলাস কস্তা বায়ার্নকে এগিয়ে দেওয়ার পর তিনিই প্রথম রোস্তভকে সমতায় ফিরিয়েছিলেন। সেটাই ছিল দলের বড় অনুপ্রেরণা।
বয়স মাত্র ২৩, কিন্তু ফুটবল মাঠে এমনই সর্দারি আজমুনের। ইরান জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন ৩২ ম্যাচ, এরই মধ্যে করে ফেলেছেন ২৩ গোল। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইয়েই ১১টি। এএফসি অঞ্চলে টিম কাহিলের সঙ্গে যা তাঁকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা বানিয়েছে। সন্দেহ নেই, আজমুনের সর্দারি দেখতে ইরানিদের গভীর চোখ থাকবে এবারের বিশ্বকাপেও। পর্তুগাল, স্পেন, মরক্কোর গ্রুপ থেকে শেষ ষোলোতে যেতে হলে যে তাঁকে এই ফর্মটাই ধরে রাখতে হবে অথবা এর চেয়ে বেশি কিছু করে দেখাতে হবে।
জাতীয় দলে অভিষেক তাঁর গত বিশ্বকাপের বছরে। কার্লোস কুইরোজ তাঁকে বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলেও রেখেছিলেন। শেষ মুহূর্তে বাদ পড়া আজমুন পরের চার বছরের মধ্যে দলের অন্যতম সেরা তারকা বনে যাবেন, ভাবা যায়নি। এই মুহূর্তে তাঁকে এশিয়ার সেরা স্ট্রাইকারও বলা হচ্ছে। ‘ইরানিয়ান মেসি’ খ্যাতি পেয়েছেন তো আরো আগেই। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর গোল করার হারই বলছে তাঁকে নিয়ে সব। ইরানের ফুটবল ইতিহাসে এ পর্যন্ত যা সর্বোচ্চ। ১০৯ গোল করা আলী দায়িকেও একসময় ছাড়িয়ে যাবেন, এটা এখন জোর দিয়েই বলা হচ্ছে।
ইরানিদের কাছে তিনি এমন একজন ফরোয়ার্ড, যিনি হেড করেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের মতো, দৌড়ান মেসির মতো—পার্থক্য হলো তিনি রুবিন কাজানে খেলেন, ইউরোপের শীর্ষ কোনো লিগে বড় ক্লাবে খেলেন না। তাঁদের স্বপ্ন এবারের বিশ্বকাপ দিয়েই আজমুন তাঁর এই পরিপার্শ্ব বদলে ফেলবেন। গত দুই বছরে লিভারপুল, এসি মিলান, লািসওর মতো ক্লাব তাঁর ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও চাইলেও দুইয়ে দুইয়ে মেলেনি এখনো। রোস্তভ হয়ে কাজানে থেকে যাওয়ায় বিশ্বকাপে অবশ্য চেনা পরিবেশই পাচ্ছেন তিনি। গত বিশ্বকাপে মেসির শেষ মুহূর্তের ঝলকে ১-০-তে হেরে আর গ্রুপ পর্ব পেরোনো হয়নি ইরানের। ঘরে বসে টিভিতে সেই বিশ্বকাপ দেখা আজমুন এবার নিশ্চয় তেমন একটা মুহূর্তেরই অপেক্ষায়, যাতে তিনি পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। রিয়াল মাদ্রিদ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বিশ্বসেরা সব ফুটবলারকে নিয়ে কাজ করা কুইরোজেরও উচ্চাশা এই তরুণকে নিয়ে, ‘শীর্ষ পর্যায়ে সফল হওয়ার মতো সব গুণই তার আছে। সে প্রতি মুহূর্তে উন্নতি করেছে। কিন্তু মাটিতেই পা রেখেছে সব সময়। এটাই তাকে সাহায্য করবে।’
২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে কম গোল ছিল ইরানের, মাত্র ৮টি। বিশ্বকাপও শেষ করেছে তারা মাত্র ১ গোল করে। এবারের বাছাইয়ে আজমুনের একারই গোল ১১টি। রাশিয়ায় প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদেরও যে কঠিন সময় উপহার দেবেন তিনি, তা আন্দাজ করাই যায়। ফিফার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নিজের গোল করা আর রাশিয়ায় ইরানের সম্ভাবনা নিয়ে আজমুনের মন্তব্যও দারুণ পরিণত, ‘ইরানি গ্রেট আলী দায়ির মতো হতে চাই আমি সত্যি। কিন্তু শুধু নিজেকে নিয়েই আমার ভাবনা নয়। আমি আমার পারফরম্যান্স দিয়ে ইরানকে সাহায্য করতে চাই। এটাই আমার লক্ষ্য।’ ইরানিরাও রাশিয়ায় নিশ্চয় সেভাবেই তাঁকে দেখতে চায়।