কূটনৈতিক রিপোর্টার: বাংলাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সজাগ দৃষ্টি রাখছে জাতিসংঘ। অভিযান পরিচালনায় কনভেনশন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এবং মানবাধিকার সুরক্ষার জন্যও সরকারকে জোর তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারান্তরীনের ঘটনায় পূর্বের উদ্বেগ আবারও তুলে ধরেছে জাতিসংঘ।
শুক্রবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশে চলমান মাদক বিরোধী অভিযানে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড ও কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি অমানবিক আচরণ- প্রসঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের অবস্থান তুলে ধরেন মহাসচিবের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক। প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতেই এসব ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। প্রশ্নোত্তর পর্বে বৃহস্পতিবারের ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশ ইস্যুতে করা প্রশ্নের আপডেট প্রসঙ্গে জানতে চান এই প্রতিবেদক।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি তুলে ধরে জাতিসংঘ সংবাদদাতা বলেন-বাংলাদেশে চলমান বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে বৃহস্পতিবারের ব্রিফ্রিংয়ে আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম।
বাংলাদেশে চলমান অভিযানে মাদক দমনের নামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ১৬ দিনে ১২৫ জন লোক প্রাণ হারিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে ছিলো গতকাল আমার প্রথম প্রশ্ন আর মুখপাত্র বিষয়টি নিয়ে আজ আপডেট জানাবেন বলে উল্লেখ করেছিলেন। আর দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছিলো তা হলো-প্রধান বিরোধ দল বিএনপির চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে অমানবিক অবস্থায় আটক রয়েছেন। যেখানে আটকে রাখা হয়েছে সেখানে প্রায়ই বিদ্যুৎ বিহীন থাকতে হয়, তাকে যে খাবারটুকুও দেয়া হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের। যদিও তিনি বিতর্কিত এই মামলাটিতে জামিন পেয়েছিলেন কিন্তু তা স্বত্বতেও সরকার তাঁকে মুক্তি দেয়নি। বরং আরো ৩ টি মামলা দিয়ে আটকে রেখেছে। এই দুটি বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি? বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যাপারে জাতিসংঘ পূর্বের অবস্থানে রয়েছে এমন ইঙ্গিত করে ফারহান হক বলেন, আপনি দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি করেছেন সে বিষয়টিতে আমরা ইতোমধ্যে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এ (মামলার) প্রক্রিয়াটি নিয়ে অতীতে যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি তার বাইরে নতুন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। বাংলাদেশে মাদক দমনে সম্প্রতি যে অভিযান চলছে সে দিকে জাতিসংঘ সজাগ দৃষ্টি রেখেছে উল্লেখ করে ফারহান বলেন, বাংলাদেশে চলমান মাদক অভিযানের বিষয়ে সজাগ রয়েছে জাতিসংঘের ইউএন অফিস অন ড্রাগস এন্ড ক্রাইম। অভিযানে মানবাধিকার যেনো লঙ্ঘন না হয় সে আহবান জানিয়ে মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান বলেন, ইউএন অফিস অন ড্রাগস এন্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)’র আওতাভুক্ত সব সদস্য দেশগুলোর উচিত মাদক দমন করার ক্ষেত্রে তাদের প্রতিশ্রুতির দিকে খেয়াল রাখা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা।
তিনি বলেন, সদস্য দেশগুলোকে ড্রাগ কন্ট্রোল কনভেনশনের ৩ টি সুনির্দিষ্ট নীতি মেনে চলতে হবে। এছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনগুলোতে বিশেষ সেশনগুলোতে মাদক দমনের ক্ষেত্রে যে বিধিগুলোর উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তা মেনে চলা জরুরী। বিচার ও অভিযানের স্বচ্ছতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি আরো বলেন, ইউএনওডিসি এ ক্ষেত্রে যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদের ন্যায়-বিচার নিশ্চিত, স্বচ্ছতা বজায় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচার পরিচালনা করবে সেসব দেশের পাশে থাকবে। যারা মাদকের অপরাধের সঙ্গে জড়িত তাদের প্রমাণ সাপেক্ষ সুষ্ঠু বিচার, স্বাভাবিক পথে ফিরিয়ে আনা এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।