কুমিল্লার দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত

Slider বাংলার আদালত

321099_123

ঢাকা: বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কুমিল্লায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন আদেশ স্থগিত করেছেন চেম্বার বিচারপতি। আগামী ৩১ মে এ নিয়ে সু্প্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে।
মঙ্গলবার চেম্বার বিচারকের আদালতে বিষয়টির ওপর শুনানি হয়।

এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম হাইকোর্টে দেয়া জামিন আদেশ স্থগিত করার আবেদন জানান। তিনি হাইকোর্টে দেয়া রায় পড়ে শুনান। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনিও হাইকোর্টে দেয়া রায় পড়ে শুনান।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার খালেদা জিয়ার তিনটি জামিন আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে জামিন আদেশ দিয়েছিলেন।

আদালত কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নাশকতার দু’টি ঘটনায় হত্যা ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা দুই মামলায় খালেদা জিয়ার ছয় মাসের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন।

অন্য দিকে নড়াইলে মানহানির মামলাটি নট প্রেসড রিজেকটেড (উপস্থাপিত হয়নি) বলে খারিজ করেন। আদালত বলেছেন, ওই আদালতে (নিম্ন আদালত) মামলাটি শুনানি করে আসুন। যদি সেখানে জামিন না হয়, তাহলে আমরা দেবো। কারণ, এটা জামিনযোগ্য মামলা।
গতকাল আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমে কুমিল্লার দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে জামিন দেন হাইকোর্ট। এরপর আদালত খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে জানতে চান, গত রোববার নড়াইলের মামলায় বিচারিক আদালতে কী আদেশ হয়েছে?

তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমরা তো মামলার নথি চাই; কিন্তু ঠিকমতো নথি পাই না। গত ২৫ মে আদেশের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু সেদিন (কোর্ট) বন্ধ ছিল।

এরপর আদালত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো: বশিরুল্লাহর কাছে জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, রোববার শুনানি হয়েছে। ৩০ আগস্ট আদেশের জন্য রেখেছে। এরপর আদালত মামলাটি নিম্ন আদালতে নিষ্পত্তি করে আসার জন্য খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের পরামর্শ দিয়ে আদেশ দেন।

আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, কুমিল্লার দুই মামলায় জামিন পাওয়ার পর এখন তার বিরুদ্ধে আর যেসব মামলা রয়েছে তা জামিনরযাগ্য। আইনগতভাবে ওই সব মামলায় সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে আদালত থেকে তিনি জামিন পাবেন। হাইকোর্টের রায়ে আমরা আনন্দিত। তবে আমি বারবার বলছি, বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি নির্ভর করছে সরকারের সদিচ্ছার ওপর। সরকার যদি তার কারাবাস দীর্ঘায়িত করতে চায় তা হলে আইনগতভাবে আমাদের কিছু করার নেই। আর সরকারের সদিচ্ছা হলে আজই তিনি মুক্তি পেতে পারেন।

তিনি বলেন, মানহানির মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আবেদন করেছিলাম। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট আদেশ দেননি। পরে আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি। এটা জামিনযোগ্য অপরাধ। হাইকোর্টও জামিন দিতে পারেন। আদালত বলেছেন, বিচারিক আদালত ঘুরে আসতে। এখন আমরা নড়াইলে যাবো। সেখানে আবেদন করব।

খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, নড়াইলের মামলায় ২৫ তারিখ দিন ধার্য ছিল। ওই দিন ছিল বন্ধ। রোববার সেখানে আদেশ দিয়েছে ৩০ আগস্ট তারিখ রেখেছে। সেটা আমাদেরকে জানায়নি। আমরা সেশন কোর্টে আবেদন করিনি, তাই নট প্রেসড করেছেন আদালত।

আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, অফিসিয়ালি খালেদা জিয়া তিনটি মামলায় অ্যারেস্ট। একটা জিয়া অরফ্যানেজ ট্রাস্ট। আর দু’টায় আজকে জামিন হয়েছে। এখন অন্য কোনো মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট নেই। আজকের আদেশের পর খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আইনগত বাধা নেই। তবে এরপর সরকারের যদি অসৎ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে কোনো মামলায় অ্যারেস্ট দেখাতে পারে।

অন্য দিকে নড়াইলের মানহানি মামলা জামিনযোগ্য। এ মামলায় সংশ্লিষ্ট কোর্ট কাস্টুডি ওয়ারেন্ট জারি করেননি। তাই এ মামলার কারণে তার কারামুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তিনি বলেন, সরকার হস্তক্ষেপ না করলে খালেদা জিয়ার কারামুক্তিতে আর কোনো বাধা হবে না।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় জামিননামা (বেইল বন্ড) দেয়া আছে। এখন কুমিল্লার মামলায় হাইকোর্টের লিখিত আদেশ পেলেই জামিননামা দেয়া হবে। এরপর স্বাভাবিক নিয়মে তার মুক্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু সরকার কোনো কূটকৌশল করে যদি অন্য মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখায়, তবে তার জামিন প্রক্রিয়া আটকে যাবে।

জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন : এ দিকে কুমিল্লার দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া ছয় মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আবেদন শুনানির জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ঠিক করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন প্রমুখ।
দুই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালায়ে সাংবাদিকদের কাছে জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানান।
আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন- আমিনুল হক, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, বদরুদ্দোজা বাদল, নওশাদ জমির, মো: আসাদুজ্জামান, রুহুল কুদ্দুস কাজল, রাগীব রউফ চৌধুরী, মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, সগীর হোসেন লিওন, জাকির হোসেন ভূঁইয়া, মির্জা আল মাহমুদ, মাসুদ রানা, সালমা সুলতানা সোমা প্রমুখ।

গত ২০ মে কুমিল্লার দু’টি ও নড়াইলের একটি মামলায় জামিন আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ২১ মে দু’টি আবেদন শুনানির জন্য আদালতের কার্যতালিকায় আসে। এ দুই আবেদন শুনানির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল প্রস্তুতির সময় চান। আদালত দুই আবেদনের শুনানির জন্য ২২ মে আড়াইটায় সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু ওই দিন এক মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের শুনানি অসমাপ্ত থাকার পর তা ২৩ মে পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। পরে শুনানি আবারো ২৪ মে পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত। এরপর রোববার তিনটি মামলায় উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত গতকাল আদেশের দিন ধার্য করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *