ইরানের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যাওয়ার পর যখন শঙ্কার মুখে এর ভবিষ্যত। তখন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলোর এক বৈঠক হয়ে গেলো। চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনায় শুক্রবার অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় জড়ো হন রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ইরানের প্রতিনিধিরা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের পরমাণু চুক্তিতে ফিরে আসতে পারেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।
এরমধ্যেই শুক্রবার ওই বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন, ইরানের পরমাণু চুক্তি বাতিল হয়ে গেলে এর জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী থাকবে।
এদিকে, ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের যেকোনো একক সিদ্ধান্ত রুখতে একটি আইন পাস করেছে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ।
অন্যদিকে, চুক্তি রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য বিশ্বশক্তিগুলোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা চেয়েছে তেহরান।
বৈঠকে চুক্তির শর্ত পুরোপুরি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কাছে নিশ্চয়তা চেয়েছে তেহরান। এছাড়া, ইউরোপের বাজারে ইরানের তেল বিক্রি এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় ইউরোপের দেশগুলোর স্পষ্ট অবস্থান নেয়াসহ কয়েকটি শর্ত দিয়েছে ইরান।
১. ইউরোপের দেশগুলোতে ইরানের তেল বিক্রির নিশ্চয়তা।
২. সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্য ও অর্থ লেনদেনে ইরানের সঙ্গে ইউরোপের ব্যাংকগুলোর সহযোগিতা বজায় রাখা।
৩. ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় ইউরোপকে শক্ত ও স্পষ্ট অবস্থান নেয়া।
৪. ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ও মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তৎপরতার বিষয়ে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির কোনো আপত্তি না করা।
অবিলম্বে এসব শর্ত বাস্তবায়নের দাবি জানান ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ইরান উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেন, ‘ইরান মুখে নয় বাস্তব পদক্ষেপ দেখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের কারণে আমাদের অর্থনীতিতে যেন নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে বিষয়ে আমরা বিশ্বশক্তিগুলোর কাছে নিশ্চয়তা চেয়েছি। অর্থনৈতিক স্বার্থের বিষয়টি মাথায় রেখেই পরমাণু চুক্তি করেছিল ইরান। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি থেকে বের হয়ে যাওয়ার কারণে যদি সেই সমস্যা আবারো দেখা দেয়, তাহলে এ চুক্তিতে ইরানের থাকার কোনো মানে হয় না।’
পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা বের হয়ে যাওয়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের এক সভায় বক্তব্যে তিনি বলেন, ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সব পক্ষকে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ইরানের ওপর একের পর এক মার্কিন নিষেধাজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি চার বছর পর পর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রতি চার বছর অন্তর যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এভাবে একটি করে আন্তর্জাতিক দলিল বাতিল করে দিতে থাকেন। তাহলে সঙ্কট ও উত্তেজনা বাড়তেই থাকবে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের পরমাণু চুক্তির অনুমোদন দেয়ায় এটি একটি বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক দলিলের স্বীকৃতি পেয়েছে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেও আলোচনার মাধ্যমে তার ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করেন ফরাসি প্রেসিডেন্টে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে চুক্তিতে ফিরিয়ে আনতে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে। ২০১৫ সালের চুক্তির ভিত্তিতে নতুন একটি কাঠামো তৈরি করতে পারি আমরা। সবার মতামতের ভিত্তিতে ওই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলেও এর শর্ত নিয়ে সৌদি আরব ও ইসরাইলের জোর আপত্তি রয়েছে। পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় এ বিষয়ে সব পক্ষের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনা হওয়া উচিত।’
এদিকে, ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় ট্রাম্পের একক ক্ষমতা রুখতে নতুন একটি আইন পাস করেছে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ। এতে বলা হয়, কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সামরিক ব্যবস্থা নিতে পারবেন না মার্কিন প্রেসিডেন্ট।