সাপ কতটা ভয়ানক? সাপে কামড়ালে যা করবেন

Slider লাইফস্টাইল

Black-Mamba

কিছু দিন আগে সাপের আক্রমণের শিকার হয়েছেন বুঝতে না পেরে ভারতের এক নারী তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে শুরু করেন। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে মারা যান দুইজনই। এই খবরটি এমন একটি দিনে পাওয়া যায় যেদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাপের দংশনের ঘটনাকে “বিশ্ব স্বাস্থ্য অগ্রাধিকার” হিসেবে বিবেচনা করার ঘোষণা করে।

প্রতিবছর ৮১ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়, যার প্রায় অর্ধেক মৃত্যুর ঘটনাই ঘটে ভারতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়। সাপের আক্রমণের শিকার হওয়ার পর সারাবিশ্বে লক্ষাধিক মানুষ অন্ধত্ব বা চিরস্থায়ী পঙ্গুত্ব বরণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এসব ঘটনাকে গ্রীষ্মপ্রধান এলাকার সবচেয়ে উপেক্ষিত ব্যাধি বলে আখ্যা দিয়েছে।

সাব-সাহারান আফ্রিকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশী সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে।

বিষাক্ত সাপ কামড় দিলে কি হয়?

বিষাক্ত সাপকে সাধারনত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। স্থায়ী দাঁতসহ সাপের বিষে সাধারনত নিউরোটক্সিক বিষ থাকে যা স্নায়ুতে আঘাত করে ও শ্বাস-প্রশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

অন্যান্য প্রজাতির সাপের দাঁত লুকানো থাকে যা সাধারণত শিকার করার সময় বা শত্রুকে আক্রমণ করার সময় ব্যবহৃত হয়। এই ধরণের সাপের আক্রমণে চামড়ার টিস্যু ক্ষিতগ্রস্ত হয় ও শরীরে অভ্যন্তরীন রক্তপাত হয়ে থাকে।

কোন সাপের বিষ সবচেয়ে বিষাক্ত?

কোন সাপের বিষ সবচেয়ে বিষাক্ত ও কোন ধরণের সাপ মানুষের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর তা নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

মাটিতে বসবাস করা যে কোন সাপের মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ ‘তাইপান’এর বসবাস অস্ট্রেলিয়ায়।

বলা হয় এই সাপের এক ছোবলে যে পরিমাণ বিষ উদগীরণ হয় তা দিয়ে ১০০ জন মানুষ মারা যেতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত এই প্রজাতির সাপের দংশনে কোনো মানুষ মারা গিয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি।

এই প্রজাতির সাপ সাধারনত লাজুক প্রকৃতির হয়ে থাকে এবং দুর্গম জায়গায় বাস করে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় এর প্রতিষেধকও সহজলভ্য। সামুদ্রিক সাপও অত্যন্ত বিষাক্ত হয়। তবে মানুষের সংস্পর্শে কম আসার কারণে এই সাপের কামড়ের ঘটনা বিরল।

অপেক্ষাকৃত কম বিষাক্ত কিন্তু অত্যন্ত বিপদজনক ব্ল্যাক মাম্বা ও উপকূলীয় তাইপান (অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায়) মানুষের জন্য বেশী ঝুঁকির কারণ। এই দুই ধরনের সাপই একই প্রজাতির এবং তাদের বিষ খুবই দ্রুত কাজ করে। সঠিক চিকিৎসা করা না হলে এই ধরণের সাপের কামড়ের শিকার ব্যক্তি আধা ঘন্টার কম সময়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে।

শীর্ষ চার প্রজাতির বাকিগুলো হলো:

১। ইন্ডিয়ান ক্রেইৎ বা কালাচ সাপ: যদিও দিনের বেলা এরা সাধারণত আক্রমণ না করলেও রাতে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দৈর্ঘ্যে এরা ১.৭৫ মিটার (৫ ফুট ৯ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

২। রাসেল’স ভাইপার: ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এলাকায় এই আক্রমণাত্মক সাপ দেখতে পাওয়া যায়। ইঁদুর প্রজাতির প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য, তাই শহর ও গ্রামের লোকালয়ের কাছে এদের পাওয়া যায়।

৩। ভারতীয় কোবরা বা গোখরা সাপ: ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এই সাপ পাওয়া যায়। এরা সাধারণত রাতে আক্রমণ করে থাকে। এই ধরণের সাপের কামড়ে দেহে অভ্যন্তরীন রক্তক্ষরণ হয়।

সাপ কামড়ালে কি করা উচিৎ?

সাপের দংশনের শিকার হলে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের পরামর্শ অনুযায়ী যা করণীয় তা হলো:

১। শান্ত থাকুন এবং অতিদ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।

২। শরীরের যে স্থানে সাপ কামড়েছে সেটি যতটা কম সম্ভব নড়াচড়া করুন। ঘড়ি বা অলঙ্কার পড়ে থাকলে তা খুলে ফেলুন।

৩। কাপড়ের বাঁধ ঢিলে করুন, তবে খুলবেন না।

নিম্নবর্তী কোনো পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করবেন না:

১। কামড়ের স্থান থেকে চুষে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।

২। কামড়ের স্থান আরো কেটে বা সেখান থেকে রক্তক্ষরণ করে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।

৩। বরফ, তাপ বা কোনো ধরনের রাসায়নিক কামড়ের স্থানে প্রয়োগ করা।

৪। আক্রান্ত ব্যক্তিকে একা ফেলে যাওয়া।

৫। কামড়ের স্থানের গিঁটের কাছে শক্ত করে বাঁধা। এর ফলে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে না এবং আক্রান্ত ব্যক্তি পঙ্গুও হতে পারেন।

বিষধর সাপ ধরা থেকেও বিরত থাকা উচিত। এমনকি মৃত সাপও সাবধানতার সাথে ধরা উচিৎ, কারণ সদ্যমৃত সাপের স্নায়ু মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরও সতেজ থাকতে পারে এবং তখন তা দংশন পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *