ঢাকা:ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গত এক দশকের যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ইতিহাস তা এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, প্রতিবেশী দেশটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের অন্যতম ঘনিষ্ঠ অংশীদার হয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভুটান। যখন ইউপিএ এবং এনডিএ শাসকগোষ্ঠী একই রকম আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশ নীতি গ্রহণ করেছে, তখন শেখ হাসিনার মতো প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি ভারতের প্রচেষ্টাকে পূর্ণতা দিয়েছে। শেখ হাসিনা যেহেতু ক্ষমতায় ১০ বছর আছেন এবং আরেকটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, তখন মধ্যম আয়ের দেশের হিসেবে উদীয়মান ঢাকাকে দিল্লির সমর্থন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া দেশটি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সামনের সারিতে আছে। এক সময় বাংলাদেশের ভারতনীতি কেমন হবে তা নির্ধারণ করেছে কট্টরপন্থি জামায়াতে ইসলামী।
সেই সময়ের একটি বিরোধপূর্ণ সময় থেকে বর্তমানে ঢাকা হলো ভারতের ‘লাইন অব ক্রেডিট’ বা ঋণ সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দেশ। অনেক বছর বিরোধী দল বিএনপির ভারত বিরোধিতার পরে স্থল ও নৌ খাতে দু’দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী থেকে আরো শক্তিশালী হয়েছে। এটা হয়েছে সন্ত্রাস বিরোধিতা থেকে মৌলবাদ নির্মূল করায়। প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব থেকে কানেকটিভিটি পর্যায়ে। বিশেষত গত চার বছর অনুকরণীয়। কারণ, উপ আঞ্চলিক সংযুক্তির উদ্যোগে একটি মূল উপাদান হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে প্রত্যাখ্যান করে সার্ককে অকর্যকর করা হয়েছে। আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে যখন ক্ষোভ বেড়ে ওঠে তখন ২০১৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। এ সময়ে ভারতের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে কোনো সময় নষ্ট করে নি বাংলাদেশ ও ভুটান। যদিও জোর দিয়ে এ কথা যথেষ্ট বলা হয় নি যে, ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ বা পূর্বাঞ্চলীয় নীতিতে বাংলাদেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘বাংলাদেশ, ভুটান, ইন্ডিয়া অ্যান্ড নেপাল’ (বিবিআইএন) ও ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন’ (বিমসটেক) উভয় উদ্যোগে ঢাকার সমর্থন নিয়েছে ভারত। এ দুটি নীতিই দিল্লির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিষয়ক নীতির পরিপূরক। ক্রমবর্ধমান সংযুক্তি বা কানেকটিভিটি বিষয়ক লিঙ্কের সুবিধা নেয়া উচিত ভারতের সরকারি খাতের। একই সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতেও একই রকম ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তা হবে উভয় দেশের জন্য বিজয়ী-বিজয়ী অবস্থা। নৌ কানেকটিভিটি হতে পারে আরেকটি খাত, যা আরও বিস্তৃত করার প্রয়োজন রয়েছে। ঢাকায় আসন্ন নির্বাচন সামনে। সেক্ষেত্রে যদি তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি হয় তা হবে ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে হাসিনার অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করা। আর এর প্রেক্ষিতে শান্তিনিকেতনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি কম করে হলেও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত বিষয়ক চুক্তি সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে সমর্থন করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তিস্তা ইস্যুতে তিনি একরোখা হয়ে আছেন। যুক্তি দিচ্ছেন, ওই চুক্তি করা হলে তার রাজ্যে পর্যাপ্ত পানি থাকবে না। এ ইস্যুতে বৃহত্তর জাতীয় ও দ্বিপক্ষীয় স্বার্থে এ চুক্তিতে রাজনৈতিক সচেতনতা জরুরি। পাশাপাশি, রোহিঙ্গা ইস্যু সমাধানের জন্য এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য মিয়ানমারের সহায়তা চাওয়া উচিত ভারতের। যাতে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরতে পারেন।
(অনলাইন দ্য ইকোনমিক টাইমসে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)