বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই মানবিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান।
২৪ মে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট অফিস (এইচডিআরও)-এ ‘মানবিক উন্নয়নের জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক’ শীর্ষক কর্মশালায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি এ অভিমত পোষণ করেন।
ড. আতিউর আরও বলেন যে, এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দূরদর্শী আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কৌশল। এবং এটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার নেতৃত্বাধীন সরকারের যথার্থ ভূমিকার কারণে।
ড. আতিউর বলেন- “বাংলাদেশের এসব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবং অনুকরণের মাধ্যমে সারা বিশ্ব সুফল পেতে পারে। ”
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন এইচডিআরও এর পরিচালক ড. সেলিম জাহান। এইচডিআরও এর কর্মকর্তারা ছাড়াও জাতিসংঘের বিভিন্ন বিভাগ, যেমন- ইউএনডিইএসএ, ইউনডিপি ব্যুরো ফর পলিসি প্রোগ্রাম এন্ড সাপোর্ট (বিপিপিএস), ইউএনডিপি ব্যুরো ফল ল্যাটিন আমেরিকান এন্ড দি ক্যারিবিয়ান (আরবিএলএসি), এবং ইউএনডিপি ক্রাইসিস প্রিভেনশন ব্যুরোর প্রতিনিধিরা এতে অংশ নিয়েছেন।
সূচনা বক্তব্যে ড. সেলিম জাহান বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁর মতে এসব উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকৃত অর্থেই ‘দরিদ্র মানুষের ব্যাংক’-এ রূপান্তরিত হয়েছে । আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক পাশাপাশি অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ সামাজিক বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং সমতাভিত্তিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
কর্মশালায় ড. আতিউর রহমান মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং এটি সারা বিশ্বে লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে।
নিবন্ধে তিনি কীভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এবং আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় সকল স্তরের মানুষের জন্য আর্থিক সেবা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশে ব্যাপকভিত্তিক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক মাধ্যমে জনগণের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, এবং ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা বা ব্যাংকিং সেবা কম পাওয়া ব্যক্তিদের এই সেবার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এবং এর ফলস্বরূপ মানবিক উন্নয়নের সূচকেও উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে।
ড. আতিউরের মতে বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিয়ে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তা থেকে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোও তাদের অতিদরিদ্র, আদিবাসী ও প্রবীণ জনগোষ্ঠীকে সেবা দেয়ার ব্যাপারে শিক্ষা নিতে পারে। এছাড়াও আর্থিক অন্তর্ভুক্তি দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির গণতন্ত্রায়নেও জোরালো ভ‚মিকা রাখে বলে তিনি মনে করেন।
ড. আতিউর তাঁর নিবন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির যে সমস্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেগুলোর উদাহরণ দেন। এর মধ্যে ছিলো- কয়েক মিলিয়ন জামানতবিহীন ব্যাংক হিসাব (দশ টাকার ব্যাংক হিসাব) খোলা, ব্যাপকভিত্তিক মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস, এজেন্ট ব্যাংকিং, স্কুল ব্যাংকিং, কৃষকের জন্য বিশেষ ঋণ সুবিধা, নারীসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ সুবিধা। এগুলো দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এসব সম্ভব করে তোলার জন্য যথার্থ প্রণোদনা ও মানব সম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য ব্যাংকারদের মানসিকতাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হয়েছে বলে জানান ড. আতিউর।
নিবন্ধ উপস্থাপন শেষে ড. আতিউর রেমিটেন্স প্রবাহ, সঞ্চয়, ক্ষুদ্র বীমাসহ আর্থিক অন্তর্ভূক্তি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অংশগ্রহণকারীদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেন।