রাজশাহী: রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের পাঁচ বিঘা ধানিজমি আছে। তাঁর জমির সামনে প্রভাবশালীরা অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করেছিলেন। এ কারণে গত তিন বছর ধরে ওই জমি পানিতে ডুবে ছিল। এবার সেই জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে।
গতকাল রোববার ধান কাটা শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই তিনি প্রায় ১০০ মণ ধান কেটে তুলেছেন। নজরুল ইসলামের মতো অর্ধশত কৃষক গতকাল ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠেছিলেন। কৃষকেরা বলেন, আজ তাঁদের নতুন দিন। প্রশাসনের সহায়তায় তাঁদের এই সুদিন ফিরে এসেছে।
উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামে গতকাল গিয়ে দেখা যায়, একদিকে সোনালি ধান, অন্যদিকে সবুজ ফসলের সমারোহ। ভুট্টা, মরিচ, করলা ও নানা ধরনের সবজির ভালো ফলন হয়েছে। একদিকে কৃষকেরা ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠেছেন, আরেক দিকে অন্য কৃষকেরা সবজিখেতের পরিচর্যা করছেন।
দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিমল কুমার প্রামাণিক বলেন, অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে উপজেলার বিভিন্ন বিলের ৩ হাজার ৭৫০ বিঘা জমি তিন বছর ধরে বছরের বেশির ভাগ সময় পানিতে ডুবে থাকত। ফসল চাষ করলেও বর্ষায় তা ডুবে যেত। আগে প্রাকৃতিকভাবে এসব বিলের পানি বারনই নদীতে গিয়ে পড়ত। বর্ষার সময় পানিতে বিল ভরে যেত। আবার বর্ষা শেষে পানি খাল হয়ে বারনই নদীতে গিয়ে পড়ত। এই বিলে সব ধরনের ফসল হতো। বিলের ধারের উঁচু জমিতে পানের বরজ করা হতো। কিন্তু অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে বিলের পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় লোকজন বলেন, তাঁরা পুকুর কাটার প্রতিবাদ জানাতে গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে উল্টো পুকুরমালিকেরা মামলা করেছেন। এই মামলা মাথায় নিয়ে কৃষকদের লড়তে হয়েছে পুকুরমালিকদের সঙ্গে। এবার উপজেলা সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসি ল্যান্ড) সমর কুমার পালের নেতৃত্বে উপজেলার আংরার বিল, আনলিয়ার বিল, শ্রীধরপুর, কোহাড়, নারায়ণপুর এলাকায় ২২টি পুকুরের ৪০টি পাড় কটে বর্ষার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। এবার এই সব জমিতে সব ধরনের ফসল হয়েছে।
শ্রীধরপুর গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, তাঁর পাঁচ বিঘা জমি রয়েছে। জমি থাকতেও চাষাবাদ করতে পারেননি। গত তিন বছর চাল কিনে খেতে হয়েছে। কিন্তু এবার ফসল ভালো হয়েছে।
উপজেলার পালশা গ্রামের কৃষক মুজিবুর রহমান বলেন, পালশার বিলে চার বছর ধরে কোনো চাষাবাদ করতে পারেননি। এবার তিনি প্রায় ৭০ মণ পেঁয়াজ তুলেছেন। এখন আবার চার বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছেন।
কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, চার বছর পরে তিনি এবার ছয় বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। ধান পাকার সময় বৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় একজন পুকুরমালিক আবার পানিনিষ্কাশনের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পরে এসি ল্যান্ড এসে পুকুরের পাড় কেটে ধান ঘরে তোলার ব্যবস্থা করে দেন।
এসি ল্যান্ড সমর কুমার পাল গতকাল কৃষকদের সঙ্গে মাঠেই ছিলেন। তিনি বলেন, এই উপজেলায় যোগদান করার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার সাদাত তাঁকে এ দায়িত্ব দেন। তিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও পুকুরমালিকদের নিয়ে বৈঠক করে পুকুরমালিকদের বোঝানো চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো ফল পাননি। এরপর বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাঁরা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেন। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রামবাসী প্রশাসনের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন।