ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদন: নির্বাচনকে সামনে রেখে হাসিনা-মোদি অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হবে

Slider রাজনীতি সারাদেশ

118276_Modi-Sheikh-Hasina_PTI

ঢাকা: মাত্র ১২ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সপ্তাহে শান্তিনিকেতনের বঙ্গভবনে অনানুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। এটা হবে গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয় অনানুষ্ঠানিক বৈঠক। এর আগে তিনি এপ্রিলে উহান সম্মেলনে চীনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে। সোমবার রাশিয়ার সোশিতে বৈঠক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে। ২৫ শে মে দু’দিনের সফরে কলকাতা পৌঁছাবেন শেখ হাসিনা এমনটা প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এ সময় দৃদেশের ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধন জোরালো হবে। কিন্তু এই দু’নেতার মধ্যতার বৈঠক বা আলোচনা আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। অনলাইন দ্য ফার্স্টপোস্টে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ‘শেখ হাসিনা ইন ইন্ডিয়া: বাংলাদেশ পিএম লাইকলি টু ব্রিং আপ রোহিঙ্গা ক্রাইসিস, তিস্তা ওয়াটার শেয়ারিং উইথ নরেন্দ্র মোদি’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন শুভা সিং। এতে তিনি আরো লিখেছেন, অনানুষ্ঠানিক এই সম্মেলন হবে শান্তি নিকেতনে নতুন গড়ে তোলা বঙ্গভবনে (বাংলাদেশ ভবন)। আসানসোলে নজরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটিতে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর। এ সময় শেখ হাসিনার টপ ইস্যুগুলোর মধ্যে থাকতে পারে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সঙ্কট ও তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি। তবে তার ভারত সফরের প্রধন উদ্দেশ্য হলো শান্তি নিকেতনে বিশ্ব ভারতী ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পসে বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন ও আসানসোলের বর্ধমানে অবস্থিত কাজী নজরুল ইসলাম ইউনিভাসির্টির সমাবর্তনে যোগ দেয়া। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে গড়ে তোলা বঙ্গ ভবন উদ্বোধন করা হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে। নরেন্দ্র মোদি বিশ্ব ভারতী ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলরও। তিনি চ্যান্সেলর হলেও এটাই হবে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রথম সফর। বাংলাদেশ ভবনে থাকবে একটি লাইব্রেরি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে একটি জাদুঘর। কাজী নজরুল ইউনিভার্সিটিতে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রি দেবেন পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর ও ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর কেশরি নাথ ত্রিপাঠি। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথী করা হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাম অনুসারে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ হয়েছে। আর এটি অবস্থিত চুরুলিয়ায় তার জন্মস্থানের কাছেই। ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশে একটি শাখার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এ বিশ্বদ্যিালয়ের। তাদের মধ্যে নিয়মিত একাডেমিক আদান প্রদান হয়। উল্লেখ্য, প্রথম দিকে মিয়ানমারে যখন রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী নৃশংস শক্তি প্রয়োগ করে তখন ভারতের যে প্রতিক্রিয়া ছিল তাতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ সরকার। একদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার শরণার্থী প্রবেশ করতে থাকে। এ সময় ভারতীয় অবস্থানে হতাশা প্রকাশ করে ঢাকা। ভারতের এই অবস্থানকে দেখা হয় মিয়ানমারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে। এরপর নিজেদের অবস্থান সংশোধন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সহায়তা হিসেবে ত্রাণ পাঠাতে ‘অপারেশন ইনসানিয়াত’ গ্রহণ করে নয়া দিল্লি। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রতি পূর্ণাঙ্গ সমর্থন প্রকাশ করা হয়। মাত্র কয়েকদিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ মিয়ানমার সফর করেছেন। তখন তিনি সে দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। তার ওই সাক্ষাতের কয়েক দিনের মাথায় হাসিনা-মোদির এই অনানুষ্ঠানিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে। দু’পক্ষই রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনা করেছে। রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ধ্বংস করে দেয়া বাড়িঘর মেরামতে সহায়তা প্রস্তাব করেছে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতি অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, দ্রুত গতিতে ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয়তার কথা জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন সুষমা স্বরাজ। এ ছাড়া আরো যে বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলোচনা হতে পারে তার ভিতর থাকতে পারে পানি, কানেকটিভিটি, বিদ্যুত ও অবকাঠামো। দু’দেশের মধ্যে এই চারটি খাতই হচ্ছে সহযোগিতার মূল স্থান। এখনও বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মধ্যে তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়টি একটি অনিষ্পন্ন ইস্যু। পানি বন্টনের ফলে রাজ্যের নদীগুলোতে পানি সরবরাহ কমে যাবে এমন যেকোনো চুক্তির বিরোধিতা করছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে শেখ হাসিনা যখন ভারত সফরে গিয়েছিলেন তখন তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেছিলেন, এ সমস্যার সন্তোসজনক সমাধানের জন্য তিনি টেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। বাংলাদেশে যেহেতু নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে তাই এ ইস্যুটি ঢাকার সরকারের কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। শেক হাসিনার বিগত সরকারের সময়ে গত দশকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক বিস্তৃত হয়েছে এবং গভীরতর হয়েছে। মাত্র ১২ মাসের মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশ দু’দেশের মধ্যেই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। তাই অনানুষ্ঠানিক বৈঠক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের পর্যালোচনার এক সম্ভাবনা খুলে দিতে পারে। এর আগে শেখ হাসিনা ভারত সফর করেছেন ২০১৭ সালে। অন্যদিকে মোদি বাংলাদেশ সফর করেছেন ২০১৫ সালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *