গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবের শ্রমবাজারে গিয়ে নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি পাঁচ নারী দেশে ফিরেছেন। গত শুক্রবার রাতে তারা ঢাকায় পৌঁছান।
নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে পালিয়ে রক্ষা পাওয়া এই নারীরা দূতাবাসের সেফহোমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে আরও চার বাংলাদেশি নারী।
এর আগে গত এপ্রিলে সৌদি আরব থেকে প্রায় অর্ধশত নারীকে একই কারণে ফিরিয়ে আনা হয়। অবশ্য এ ধরনের ঘটনা শুধু সৌদি আরবেই নয়, আরব আমিরাত, জর্ডান, লেবানন ও কাতারের মতো মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে নারী কর্মীরা যাচ্ছেন, তার প্রতিটিতেই কমবেশি ঘটছে। সরকারের পক্ষ থেকে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার পরও থামানো যাচ্ছে না মধ্যপ্রাচ্যের নিয়োগকর্তাদের নির্যাতন।
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুতে বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবে যাওয়ার পর ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ভোলা, নওগাঁ, বরিশাল, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা ও ময়মনসিংহের নয় নারী নিয়োগকর্তার নির্যাতনের শিকার হন। এর মধ্যে ময়মনসিংহের দুই নারী সম্পর্কে মা ও মেয়ে। গত আড়াই মাসে তারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহায়তায় দূতাবাসের তত্ত্বাবধানের পরিচালিত দাম্মামের খোবার এলাকার একটি সেফ হোমে নিয়ে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
বিরূপ পরিস্থিতির শিকার এই নারীরা সৌদি আরবে আর অবস্থানে রাজি না হওয়ায় দূতাবাস তাদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির পর শুক্রবার রাত ১১টায় ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, ভোলা, নওগাঁ ও ময়মনসিংহের বাসিন্দা মোট পাঁচ নারী এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্ক থেকে তাদের বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।
রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) সারওয়ার আলম জানিয়েছিলেন, ক্যাম্পে থাকা বাকি চার নারীকেও আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে বাংলাদেশে পাঠানো হবে।
জানা যায়, সৌদি আরবে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে প্রায় লক্ষাধিক নারী গৃহকর্মী পাঠানো হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশকেই দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এদের একটি বড় অংশ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
বাংলাদেশি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, মূলত তিনটি কারণে নারী গৃহকর্মীরা তাদের কাজ ছেড়ে পালাচ্ছেন। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, গৃহকর্তার কাছ থেকে নানা দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের শিকার হওয়া, গৃহকর্মীদের দিয়ে অত্যন্ত কঠিন কাজ করানো এবং গৃহকর্মীদের নিজের বাড়ির প্রতি দুর্বলতা। অবশ্য শুধু বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীরাই নয়, সৌদি নাগরিকদের বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগ সব দেশের গৃহকর্মীদেরই আছে এবং ছিল। এর মধ্যে ২০১৫ সালে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মীর ওপর যৌন নির্যাতনের একটি খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে নিন্দার ঝড় তুলেছিল। সেবার গৃহকর্মীর ওপর যৌন নির্যাতন চালাতে গিয়ে স্ত্রীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন এক সৌদি নাগরিক। স্বামীর আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে সেই নারী ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
২০১৬ সালে এক ভারতীয় গৃহকর্মী মুক্তি চাইলে সৌদি গৃহকর্তা তার ওপর হামলে পড়েন। কেবল তাই নয়, ক্ষুব্ধ হয়ে গৃহকর্তা একটি ছুরি দিয়ে ওই গৃহকর্মীর হাত কেটে ফেলেন। ২০১৭ সালের শেষার্ধে রোমহর্ষকভাবে নির্যাতিত বাংলাদেশি এক নারী কর্মীর সাক্ষাৎকারের ভিডিও বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। ভিডিওতে চুয়াডাঙ্গার ওই নারীর এক হাতে ক্ষতচিহ্ন, আরেক হাতে গোটা গোটা ফোস্কা দেখা যায়। প্রতিদিন তাকে ছয় থেকে সাতবার গরম লোহা দিয়ে ছেঁকা দেওয়াতেই এসব ফোস্কার সৃষ্টি হয়েছিল।