সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সংগঠিত ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ঘটনার জন্য হলের ২৫ জন ছাত্রীকে অভিযুক্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একইসঙ্গে ওই ছাত্রীদের শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ পায় ওই শোকজ নোটিশটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্বাক্ষরিত নোটিশে ২৫ ছাত্রীকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই হলের অন্য ছাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। হয়রানির আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ।
ছাত্রীদের কাছে পাঠানো ওই নোটিশে বলা হয়েছে, গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে আপনি কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা, অসত্য রটনা ও গুজব ছড়িয়েছেন যে, ওই হলের আবাসিক ছাত্রী ইশরাত জাহান এশা অন্য এক আবাসিক ছাত্রী মুর্শিদা আক্তরের পায়ের রগ কেটে দিয়েছেন এবং তাকে মারধর করেছেন। আপনি অন্য আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করেছেন এবং তার আলোকচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার এ ধরনের পূর্বপরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা হলের ছাত্রীদের ভীষণভাবে উত্তেজিত ও আতঙ্কিত করে। তা ছাড়া আপনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে সংঘবদ্ধ হয়ে এশাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেছেন এবং জোরপূর্বক এশার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এবং তার বস্ত্রহরণ করেন।
নোটিশে আরও বলা হয়, ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে আপনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। একজন ছাত্রী কর্তৃক এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও আইনের সুস্পষ্ট পরিপন্থী। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা পরিষদ ও সিন্ডিকেটের সুপারিশ মোতাবেক কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না-নোটিশে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। নোটিশ পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে উত্তর না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শাস্তি হয়ে যাবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের কয়েকজন ছাত্রী বলেন, ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত না থাকার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার তাদের শোকজ নোটিশ পাঠিয়ে হয়রানি করছে। ওই রাতে এশা রগ কাটেনি ঠিক আছে, কিন্তু তিনি নিয়মিতই ছাত্রীদের নির্যাতন করতেন। এ কারণে নির্যাতিত ছাত্রীরা ওই রাতে সুযোগ পেয়ে তার প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এশার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সাধারণ ছাত্রীদের হয়রানি করছে।
ছাত্রীদের নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাঁধা দেওয়ার কারণে ওই রাতে ঝামেলা হয়েছে। তবে সেখানে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সেটি আরও বেড়েছে। এখন এসব নোটিশ দিয়ে কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়। কারণ তাতে ঝামেলা আরও বাড়তে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী বলেন, ছাত্রীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কারও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে কেবল তাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইশরাত জাহান এশা কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের নিজ কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করেন। এরই মধ্যে হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোর্শেদা খানমের রগ কেটে দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এর পর উত্তেজিত ছাত্রীরা এশার শাস্তি দাবি করেন। অপরাধ স্বীকার করায় ও বেশ কয়েক দিক থেকে রগ কাটার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন দাবি করে তাৎক্ষণিকভাবে এশাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর অধ্যপক ড. গোলাম রব্বানী। কিন্তু পরবর্তীতে উল্টো এশাকে লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।