কারাগারে খালেদার প্রথম ইফতার, যা খেলেন

Slider বিচিত্র

resize-350x300x1image-138489-1526654382

পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে গৃহকর্মী ফাতেমা বেগমকে নিয়ে রমজানের প্রথম ইফতার করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারাগারে তৈরি করা ইফতারই খেয়েছেন তিনি। বুট-পেয়াজু, মুড়ি, খুরমা ও শরবতের পাশপাশি কিছু ফলও ছিল। আজ শুক্রবার কারাগারের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট মামলায় ৫ বছরের সাজায় খালেদা জিয়া পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড়ের কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। আদালতের আদেশে তার সঙ্গে রয়েছেন গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম।

খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার জানান, ‘আজকে রমজানের প্রথম দিন ম্যাডামের পরিবারের সদস্যরা কোনো অনুমতি পাননি। ফলে পরিবারের সদস্যরা যেতে পারেননি।’

আজ বিকেলে ৩টার দিকে খালেদা জিয়ার জন্য তৈরি ইফতার নিয়ে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা কারাগারের ফটকে যান। কিন্তু ইফতার সামগ্রি গ্রহন না করে তাদের মহিলা পুলিশ দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো ইফতার সামগ্রি গ্রহন করার সুযোগ না বলে কারা কর্মকর্তারা মহিলা নেত্রীদের জানিয়ে দেস।

‘খালেদা জিয়ার চেয়ার ফাঁকা’

প্রতিবছর রাজধানীর ইস্কটন লেডিস ক্লাবে মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের পাশে বসিয়ে রমজানের প্রথম ইফতার করতেন খালেদা জিয়া। এবার কারাগারে বন্দী থাকায় এই ইফতার অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেও আজ মঞ্চে এতিমদের পাশে বেগম খালেদা জিয়ার আসন শূন্য রাখা হয়।

খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এতিম শিক্ষার্থীসহ ওলামা-মাশায়েখদের স্বাগত জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ইফতার শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে অত্যন্ত ভরাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা এই ইফতার মাহফিলের অনুষ্ঠান করছি। প্রতিবছরে পয়লা রমজানে এই দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধী দলীয় নেতা যিনি ১৬ কোটি মানুষের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজকে আমাদের মাঝে নেই। এই সময়ে তিনি কারাগারে। প্রত্যেক বছর তিনি এখানে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ইফতার করেন। আজকে তিনি কারাগারের অন্ধকারে একেবারে নির্জনে প্রথম রমজানের ইফতার করছেন। এটা আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া চাইব, আল্লাহ যেন তাকে অতিদ্রুত মুক্তি দিয়ে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেন।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা এক কঠিন সময় পার করছি, যে সময়টা দেশের জন্য, জাতির জন্য অত্যন্ত ক্রান্তিকাল। এই সময়ে আমরা সাহসেব সঙ্গে ধর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে আনতে হবে, দেশনেত্রীর মুক্তিকে ছিনিয়ে আনতে হবে। এই জগদ্দল যে পাথর আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে, ফ্যাসিবাদ একনায়ক চেপে বসেছে, তার থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংগ্রাম করতে হবে।’

লন্ডন অবস্থারত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শুভেচ্ছা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার আজকে আপনাদের সামনে কথা বলার কথা ছিল। যে কারণে উনি জুম্মার নামাজে থাকায় কথা বলতে পারলেন না। তিনি আপনাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, রমজনুল মোবারক জানিয়েছেন। তিনি তার জন্য, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আপনাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন।’

ইফতারে দলের মহাসচিব ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমূখ ছিলেন।

ওলামা-মাশায়েখ ও এতিমদের সম্মানে বিএনপি এই ইফতার পার্টির আয়োজন করে। এতে ফার্মগেইটের মদিনাতুল উলুম বালক বালিকা কামিল মাদ্রাসা, শান্তিনগর মাদ্রাসা ও গোপীবাগ মাদ্রাসার দেড় শতাধিক এতিম ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেয়।

ওলামা-মাশায়েকদের মধ্যে ইফতারে ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান মাওলানা সাইয়িদ কামাল উদ্দিন জাফরী, রাজধানীর সোহবানবাগ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শাহ ওয়ালী উল্লাহ, মসজিদ মিশনের সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মিরপুর জামেয়া এমদাদিয়া মাদ্রাসার মহতামিম মাওলানা আবু তাহের জেহাদী, কামরাঙ্গীরচর মাদ্রাসা-ই নূরীয়ার মোহাদ্দিস মুফতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী উলামা দলের সভাপতি হাফেজ আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শাহ মো. নেসারুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা সেলিম রেজা।

ইফতার শুরুর আগে কারাগারে অসুস্থ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্বাস্থ্য এবং দেশের অগ্রগতি ও শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *