চট্টগ্রাম: বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করার দায়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থি শিক্ষক ও সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহিতার মামলা নিতে চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)কে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহ¯পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতের আবু সালেম মোহাম্মদ নোমান এ আদেশ দেন বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
তিনি বলেন, আদালত তার আদেশে আসামীর বিরুদ্ধে জাতির জনক ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তিসহ মহান মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হিসেবে আখ্যায়িত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকার কথা বলেন।
ফলে সিআরপিসি-১৯৬ ধারায় বিধানের আলোকে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করার আদেশ দেন। এর আগে সকালে শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে রাস্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আসাদুজ্জামান তানভীর। মামলায় তিনি নিজেকে ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে পরিচয় দেন।
বাদীপক্ষের আরেক আইনজীবী আজহারুল হক জানান, মামলায় চবির সমাজতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১২৩ক, ১২৪ক, ১৭৭, ৫০০, ৫০১, ৫০২ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগের বিবরণে বলার হয়, গত ৬ই মে চকবাজার এলাকায় হোটেল জামানের সামনে ভাসমান পত্রিকা বিক্রেতার কাছে থাকা দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার শেষ পাতায়, মুক্তিযুদ্ধ হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, বিতর্কিত চবি শিক্ষক আনোয়ারের গবেষণায় বঙ্গবন্ধুকেও কটূক্তি শিরোনামের সংবাদ দেখতে পান বাদী।
উক্ত সংবাদের চুম্বক অংশে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলে উল্লেখ করেছেন।
এ বক্তব্যের সপক্ষে তিনি কোনো ধরনের প্রমাণ কিংবা রেফারেন্স উল্লেখ করেননি। অপরদিকে তিনি বঙ্গবন্ধু ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোদ্ধারা ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ফসল বলে উল্লেখ করেন।
আসামি বলেন এক সময়ের নিরপেক্ষ দল বর্তমানে আওয়ামী লীগ সাম্প্রদায়িক দলে পরিণত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে তিনি বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলার সঙ্গে সরাসরি আওয়ামী লীগের স¤পৃক্ততা দাবি করেছেন।
উক্ত সংবাদ পড়ে বাদী মর্মাহত হন এবং বিভিন্নভাবে আসামির খবরাখবর নিতে থাকেন। বাদী বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারেন, উল্লেখিত সংবাদের বিষয়টি আসামি তার প্রকাশিত জার্নালে বিশদভাবে বর্ননা করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্লোবাল জার্নাল অব হিউমেন সোশ্যাল সায়েন্স জার্নালে ধর্মীয় রাজনীতি এবং বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, একটি চলমান সংকট শিরোনামের প্রবন্ধ লিখেন অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন; সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আপত্তিকর ও মানহানিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। এই শিক্ষক আবার ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বলেও উল্লেখ করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ২০শে নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যা¤পাসে নিজের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স¤পাদক দিয়াজ ইরফানের ঝুলন্ত লাশ। এ ঘটনায় দিয়াজের মায়ের করা হত্যা মামলায় শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে নেওয়া জামিন শেষ হওয়ার পর গত বছরের ১৮ই ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আতœসমর্পণ করে আনোয়ার হোসেন জামিন আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান আনোয়ার হোসেন।
এদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে প্রথম ময়না তদন্তের ২০১৬ সালের পর ২৩শে নভেম্বর চিকিৎসকরা ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের মত্যুর কারণ আতœহত্যা বলে জানান। এরপর আদালতের নির্দেশে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের জন্য দিয়াজের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজে দিয়াজের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত স¤পন্ন হওয়ার চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ২০১৭ সালের ৩০শে জুলাই সিআইডি জানায়, দিয়াজের মৃত্যু শ্বাসরোধজনিত হত্যাকা-। তবে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। দিয়াজের মৃত্যুরহস্য এখনো উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।