বিবিসি, ঢাকা:বাংলাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছে, রোববার বিকেলের মধ্যে কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করা না হলে আগামীকাল সোমবার তারা দেশের সবকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অনির্দিষ্টকালের জন্যে ছাত্র ধর্মঘট ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে। পরিষদের নেতারা এসময় শিক্ষার্থীদেরকে সব ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনেরও আহবান জানিয়েছে।
পরিষদের নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন পরে বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা কর্মসূচি বাতিল করেছিলাম। কিন্তু কোটা বাতিলের ঘোষণার পর ৩২ দিন পার হয়ে গেলেও আমরা এখনও কোন প্রজ্ঞাপন জারি হতে দেখিনি।”
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে এই আল্টিমেটাম ঘোষণার পর সরকারের প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রজ্ঞাপন প্রকাশের জন্যে আন্দোলনের হুমকি সমীচীন নয়।
ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের বলেছেন, “শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে হবে। কোটা নিয়ে আন্দোলন করা, ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করা ঠিক না। আমি আশা করি তারা পড়াশোনায় ফিরে যাবেন।”
এই পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা ও সরকার একটা মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে গেছে।
সরকার বলছে, প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের কথা ঘোষণা করলেও এব্যাপারে তিনি কোন সময়সীমার কথা উল্লেখ করেননি। সরকারের সন্দেহ, এই আন্দোলনের পেছনে বিরোধী বিএনপিও জড়িত থাকতে পারে।
কিন্তু মামুন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর তারা কয়েক দফায় বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন এবং সেসব বৈঠকে তাদেরকে ৭ই মে’র মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারির ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।
এর আগে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে কোটা পদ্ধতি বাতিলের কথা ঘোষণা করেন। তারপর গত প্রায় এক মাসে আন্দোলনকারী নেতারা এবিষয়ে গেজেট প্রকাশের জন্যে সরকারের কাছে বারবার দাবি জানিয়ে এসেছেন। এমনকি নানা সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে গেজেট নিয়ে টালবাহানা, নাটক করারও অভিযোগ এনেছেন। এখন তারা গেজেট প্রকাশের জন্যে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়ে ছাত্র ধর্মঘটেরও হুমকি দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে এই কোটা বাতিলের কথা বলেছেন। অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, কোটা ব্যবস্থা তিনি বাতিল করে দিয়েছেন। এটি নিয়ে এখন আর কথা বলার কিছু নেই। গত সপ্তাহে ছাত্রলীগের সম্মেলনেও তিনি আন্দোলনকারীদের ইঙ্গিত করে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যান্ডালিজম বা ভাঙচুর সহ্য করা হবে না। উপাচার্যের বাসভবনের হামলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, এধরনের ঘটনা যারা ঘটাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গতকালই বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কোটার সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের সমালোচনা করেছেন। এমনকি আন্দোলনকারীরা শিক্ষার্থী কিনা সেটা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। বলেছেন, “আন্দোলনকারীরা সবাই যদি শিক্ষার্থী হয়, তাহলে তাদের মধ্যে একটা শিষ্টাচার থাকা উচিত, আমি মনে করি ছাত্রদের পক্ষ থেকে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া শিষ্টাচার বহির্ভূত।”
তিনি বলেন, “এরা অবুঝ নন, বুঝেই তারা সেটা করছেন।” মি: ইমাম আরো বলেন, “সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই বলছি যারা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের অধিকাংশই ছাত্র শিবিরের।”
হাসান আল মামুন এই বক্তব্য অস্বীকার করে বলেছেন, সরকার দলীয় ছাত্রছাত্রীরাও এই নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার এই বক্তব্য ভুল।
এর আগে জাতীয় সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও এই আন্দোলনের সমালোচনা করেছিলেন। তার কিছু বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল।
এইচ টি ইমাম বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। কিন্তু তারা যদি এরকম আল্টিমেটাম দেয় তাহলে সরকারও অন্য অবস্থানে চলে যেতে পারে।”
তিনি মনে করেন, এই আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। এর পেছনে যে বিএনপি নেই সেটাই বা কি করে বলবো। নির্বাচনের আগে তারা একটি ইস্যু দাঁড় করাতে চাইছেন।
আল্টিমেটাম দিয়ে সরকারের সাথে আন্দোলনকারীরা বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন বলেন, “আমরা এটা কখনো চাই না। আমরা একটা সমঝোতা করার চেষ্টা করেছি। এখনো এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতিই নেই। সেক্ষেত্রে আমরা কি করবো? এভাবে বসে থাকব?”