ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২০ কিলোমিটার যানজট

Slider চট্টগ্রাম

116988_lomba

মীরসরাই (চট্টগ্রাম): দুদিন ধরে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে। সড়কের দু’পাশে প্রায় ১২০ কিলোমিটার জুড়ে যানজট লেগে আছে। গত বুধবার রাত থেকে চারলেনের এই মহাসড়কটিতে এই যানজট তৈরি হয়। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। জানা গেছে, ফেনীর ফতেপুর রেলগেট থেকে মীরসরাই উপজেলা পেরিয়ে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত পৌঁছেছে এই যানজট। এই যানজট গতকাল রাতের মধ্যে নিরসন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যানজটের সূত্রস্থলের নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার রেজাউল মজিদ।

সরজমিনে, প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীগণ থেকে জানা যায় এ সময় দূর-দূরান্তের সাধারণ যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের আর সীমা নেই। অনেক মহিলা ও শিশু পথিমধ্যে খাবার ও স্যানিটেশন সংকটে অসুস্থ হয়ে যাবার খবরও পাওয়া গেছে। পশু বহনকারীরা পশু নামিয়ে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছে। অনেকে বিকল্প উপায়ে রেলস্টেশন খুঁজে ট্রেনে চড়ে এই দুর্ভোগের অবসান করেছেন। কেউ কেউ উল্টো পথে কেউ কেউ পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছার রেকর্ড করেছে এমন অনেক ভুক্তভোগীরও দেখা পাওয়া যায়।

একদল গরু নিয়ে মীরসরাই সদর এলাকা পার হওয়া জনৈক সায়দুল হক (৪৮) বলেন, নোয়াখালী থেকে গরু নিয়ে দুইদিন আগে রওনা হয়ে অবশেষে সেই গরু ট্রাক থেকে নামিয়ে ফেনী থেকে পায়ে যাত্রা করে ২০ ঘণ্টা পর আজ মীরসরাই পার হচ্ছেন। চট্টগ্রাম পৌঁছাতে রাত হোক বা আরো ১ দিন লাগুক কি আর করা বলেন তিনি। নিজে পথে চা নাস্তা খাচ্ছেন কখনো গরুগুলোকেও রাস্তার পাশে খাওয়াচ্ছেন এমনটাই জানালেন উক্ত ব্যক্তি। কুমিল্লা রওনা হওয়া মীরসরাইয়ের সায়েফ উল্লাহ ১৫ মিনিটের পথ ৮ ঘণ্টা নাগাদ পার হয়ে অবশেষে উল্টো পথে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন।

হাইওয়ে পুলিশ-এর জোরারগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল সরকার জানায় ফেনীর ফতেহপুর রেল ওভারপাস নির্মাণের স্থলে বিকল হয়ে যাওয়া ট্রাক অপসারণে বিলম্ব হওয়ায় এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যা এই পর্যন্ত লেগেই আছে তবে হাইওয়ে ও থানা পুলিশ সকলে আপ্রাণ চেষ্টা করে মহাসড়ক সচল রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এতো বেশি যানবাহন ও মালবাহী গাড়ি যে যানজট আর ছোট করা সম্ভব হয়নি। মহাসড়কে দুর্ভোগে নাকাল হয়ে পড়েছে দূরপাল্লার ট্রাক, লরিসহ বাসের যাত্রীরা। সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাঝে মাঝে থেমে বৃষ্টি ও ফেনীর ফতেহপুর রেল ওভারপাস নির্মাণ কাজের স্থলে বিকল্প সংকীর্ণ সড়কের কারণে এ যানজট লাগে মূলত। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া যাত্রী নাছির উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে উঠে সকাল সাড়ে ৭টায় বড়দারোগার এলাকায় আসার পর যানজটে পড়ি এবং মীরসরাইয়ে আসার পর যানজট আরো তীব্র আকার ধারণ করে। দিনভর এই যানজটেই পড়ে আছেন এমন অসংখ্য যাত্রী। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী যাত্রীরা তো ফেনী পারও হতে পারেনি আর এগুতেও পারেনি। দিনভর রোদ বৃষ্টির ভ্যাপসা গরমে সকলের জীবন যেন ওষ্ঠাগত।

চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাক চট্টমেট্রো ট- ০৪-০৪৯৭ এর চালক বাবুল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম থেকে বের হয়ে বড়দারোগারহাট আসলে রাত ১২টায় যানজটে পড়ি। শুক্রবার বিকাল নাগাদ বড়তাকিয়া এলাকায় পৌঁছি। এ সময় এমন আরো অনেক চালকসহ রাস্তার মাঝখানে বসে গল্প করছিল কয়েকজন চালক মিলে। চালক বাবুল বলে শুধুমাত্র ফেনী রেলগেইটই এখন এই রুটে যানজটের একমাত্র কারণ। এখানে প্রায়ই যানজট হচ্ছে। অথচ বড় করে অস্থায়ী রাস্তা করে দিলেই এমনটা হতো না।
এ বিষয়ে মীরসরাই থানার ওসি সাইরুল বলেন, অপ্রত্যাশিত এই যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে জোরারগঞ্জ ও মীরসরাই থানার সকল পুলিশ সদস্য দিনভর এবং অদ্যাবধি প্রতিটি ইউটার্নে অবস্থান নিয়ে যানজট নিরসনে কাজ করছে। বিক্ষিপ্ত সকল গাড়িকে শৃঙ্খলায় রেখে আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে মহাসড়ক সচল করতে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, আশা করছি গতকাল রাতের মধ্যেই পুরো মহাসড়ক সচল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণেও কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।

এদিকে সৃষ্ট এই যানজটে ঢাকামুখী দূরপাল্লার অনেক বাসই দিনের বেলা যাত্রা বাতিল করায় অধিকাংশ মানুষ রেলে ঢাকা যাত্রা করেছে। আবার অনেকে বিমানে গন্তব্যে পৌঁছেছে। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ ও যারা যাত্রা পথে বেরিয়ে গেছেন তাদের পতিত হতে হয় বেগতিক দুরবস্থায়।
এই বিষয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেন-এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সওজ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আলী বলেন, আমি খোঁজ নিয়েছি কয়েকটি ট্রাক ঘটনাস্থলে বিকল হওয়ায় এবং বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে অতিরিক্ত ট্রাক ঢাকামুখী থাকায় এমন যানজটের সৃষ্টি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে শিগগিরই তা সচল হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এই বিষয়ে উক্ত যানজটের কেন্দ্রবিন্দু স্থল ফেনী ফতেপুর রেল ক্রসিং এ নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার-এর দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর-এর ব্রিগেডিয়ার রেজাউল মজিদ-এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান এখানে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারটির কাজ দ্রুত চলছে, বিকল্প সড়কটি টুলেন-এর বলে অনেক গাড়ি ইতিমধ্যে ফেনী শহরের বিকল্প সড়ক হয়ে পারাপার হতো। কিন্তু সেদিক দিয়ে ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল বলে গাড়িগুলো এখান দিয়েই পারাপার হতে হয়। আবার আসন্ন রমজানের কারণে মালবাহী গাড়ি সড়কে বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। তবু ও নির্মাণাধীন এলাকায় থাকা সেনাসদস্যগণ এবং অন্যান্য বিভাগ দিন রাত বসে নেই। আশা করছি যথাশিগগিরই এই সংকট কেটে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজও এত দ্রুত গতিতে চলছে যে আগামী দুই মাসের মধ্যেই আমরা উদ্বোধন করার আশা করছি। এদিকে পর্যবেক্ষক মহলের প্রস্তাব উক্ত স্থানে সড়ককে অস্থায়ীভাবে আরো প্রশস্ত করে দেয়া হলেই এই সংকটের উত্তরণ সম্ভব, নচেত এমন দুর্যোগের পুনরাবৃত্তি অমূলক নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *