‘সুপারি কিলার’ লাগিয়ে খুনের চক্রান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মততা ব্যানার্জি। এমনকি এজন্য দক্ষিণ কলকাতার হরিশ চ্যাটার্জি রোডে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির আশপাশের এলাকায় কিলাররা রেইকিও (খোঁজখবর) করে গেছে বলে জানান তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার ‘জি-২৪ ঘণ্টা’ চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে এই মারাত্মক অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে তাঁর এই মন্তব্যে সারা রাজ্য তোলপাড় শুরু হয়েছে।
দেশ জুড়ে চলা ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষামতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী যেভাবে প্রতিবাদ করেন সেখানে দাঁড়িয়ে কি তাঁর নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে কি না? সেই প্রশ্নের উত্তরেই মমতা জানান ‘আমি সাম্প্রদায়িক থাকতেই ভালোবাসি। কিন্তু আমাকে খুন করার জন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অগ্রিম রুপি দেওয়া হয়েছে। খুনিদের ভাষায় যেটা ‘সুপারি’ বলে। আমি যেহেতু প্রশাসনে রয়েছি, তাই আমরা খবরটা পেয়েছি। এটা নিয়ে খোঁজ খবরও চলছে। ইতিমধ্যেই তারা (সুপারি কিলাররা) আমার বাড়িতে রেইকিও করে গেছে যে, কিভাবে কি করা যায়। পুলিশের পক্ষ থেকেও আমাকে বাড়ি পরিবর্তন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু আমি কখনও জীবনের ভয় পাই না। ভয় পাওয়াটা আমার কাজ নয়’। মমতার দাবী তাঁর এই প্রাণনাশের হুমকির কথা তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস এমনকি নিজের পরিবারের সদস্যরাও জানেন না।
মমতার অভিমত ‘যারা আমার সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে লড়াই করতে পারে না, তারা কাপুরুষ। আর তারাই এই ধরনের কাজ করতে চাইছে এবং খুনটা করিয়ে দিয়ে মায়াকান্না কেঁদে তখন সবচেয়ে দু:খিত বলে মানুষকে দেখাবে’। এই ষড়যন্ত্রের পিছনে গণমাধ্যমের কেউ কেউ জড়িত আছে বলেও এদিন অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে এবারই নয়, এর আগেও আমাকে একাধিকবার খুনের চক্রান্ত করা হয়েছিল বলে জানান মমতা। কিন্তু প্রতিবারই তিনি মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছেন।
মমতা বলেন, ‘খুনের চেষ্টা করলে আমার মনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও বেশি বেড়ে যায়। আমি যতদিন পৃথিবীতে বাঁচবো ততদিন মানুষের কথা বলবো, কাজ করবো। আমার কণ্ঠ যতদিন উজ্জীবীত থাকবে, ততদিন এই কণ্ঠ রোধ করা যাবে না’।
মমতার অভিমত তাঁকে মেরে তৃণমূলকে শেষ করা যাবে না, কারণ তৃণমূলের রাজনৈতিক উইল তৈরি করা হয়েগেছে। তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান জানান, ‘আমার অবর্তমানে আমার দলকে কে চালাবে বা সরকার কে চালাবে সেটাও আমার লেখা আছে। আমি রাজনৈতিক উইল করে গেছি। তাই কেউ যেন এমনটা না ভাবে যে মমতা ব্যানার্জিকে শেষ করে তৃণমূল কংগ্রেস কিংবা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটাকে শেষ করা যাবে। আমার প্ল্যানিং ক্যালেন্ডারে গোটা বিষয়টি লিপিবদ্ধ করা আছে। আমাকে যদি কখনও এই ধরনের ঘটনা সামলাতে হয় তবে ততক্ষণাৎ কি হবে আমি সেটা তৈরি করেই রেখেছি। অতএব ভয়ের কিছু নেই’।
মুখ্যমন্ত্রীকে এই খুনের চক্রান্তের ঘটনায় সিপিআইএম সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘উনি (মমতা) নিজে মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশমন্ত্রীও। আমরা তাঁর সুরক্ষিত জীবন চাই’। তবে বিপদে পড়লেই মমতা এই ধরনের ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব খাড়া করেন বলে অভিযোগ সেলিমের। তিনি বলেন ‘আমরা দেখেছি যে উনি যখনই কোন বিপদে পড়েন তখনই একথা বলেন যে আমাকে মারতে এসেছে, খুন করতে এসেছে। আমরা গত বিশ বছর ধরে এটা শুনে এসেছি’।