রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনে রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ।
সঙ্কটের মূল কারণ মোকাবেলায় মানবাধিকার, নাগরিকত্ব, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়নসহ রাখাইন পরামর্শক কমিশনের (আনান কমিশন) সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর এই পরিষদ। পরিষদ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং ধর্ষণ ও শিশু নিপীড়নসহ নৃশংসতার সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নৃশংসতার অভিযোগগুলো স্বচ্ছতার সাথে তদন্তের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর শেষে নিউ ইয়র্ক ফিরে গতকাল দেয়া এক বিবৃতিতে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এ আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে বিবৃতির খসড়া নিয়ে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছিল চীন। তবে শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে একটি সমঝোতা হয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদল গত ২৮ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর করেছে। প্রতিনিধিরা কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন এবং রাখাইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলোয় পুড়িয়ে দেয়া গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সাথে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মানবিক সঙ্কটের মাত্রা দেখে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা স্তম্ভিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিষদ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা প্রশংসাযোগ্য। বাংলাদেশকে সহায়তায় জাতিসঙ্ঘের ভূমিকাকে নিরাপত্তা পরিষদ সমর্থন দিয়ে যাবে। অন্য দিকে উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রস্তুতিও লক্ষ্য করেছে নিরাপত্তা পরিষদ।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া সমঝোতা স্মারককে (এমওইউ) স্বাগত জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ উদ্বাস্তুদের নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও জাতিসঙ্ঘের সাথে কাজ করার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পরিষদ মানবিক কাজের সাথে জড়িত জাতিসঙ্ঘের অঙ্গ সংস্থা ও তাদের অংশীদার, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিওসমূহের রাখাইন রাজ্যে দ্রুত বিঘœহীন প্রবেশাধিকার দেয়ার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ হিসাবে জাতিসঙ্ঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর ও জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপিকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পরিষদ।
মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা ও ঐক্যের প্রতি নিরাপত্তা পরিষদ তাদের প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
বিবৃতিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে ও উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছা, নিরাপদ ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের জন্য আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার এবং জাতিসঙ্ঘের সাথে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়েছে নিরাপত্তা পরিষদ।