কারো ছিল না পা, কারো কোমড়ও ভেঙ্গে গেছে। কারো সামর্থ্য নেই একটু হাঁটার। এমন সব প্রাণীকে কোলে নিয়ে আদর করছিলেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। আর বারবার বলছিলেন, পশু-পাখির প্রতি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে, তাদের প্রতি সদয় হতে হবে। তিনি বলেন, এসব পশু-পাখি কিভাবে মানুষের উপকার করে তা আসলে কারো চোখে পড়ে না। শুধু পরিবেশের স্বার্থে নয় মানুষের নিজস্ব মমত্ববোধকে জাগিযে তুলতে এদের প্রতি সবাইকে সদয় হতে হবে।
মঙ্গলবার রবিনহুড দ্য অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ারের উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভায় অভিনেত্রী জয়া আহসানসহ রাজনীতিবিদরা এমন কথা বললেন। রবিনহুড দ্য অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ার গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন দুর্ঘটনা বা রোগে আক্রান্ত হয়ে রাস্তাঘাটে অনেক বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়াল পড়ে থাকে। এদের দেখার কেউ থাকে না। আহত হয়ে কাতড়াতে দেখেও এগিয়ে আসে না তাদের রক্ষায়, চিকিৎসাতো দূরে থাক। এমন কী অনেকে ইচ্ছে করেও পশু পাখিকে নির্দয়ভাবে আহত রক্তাক্ত করে রাস্তার পাশে ফেলে চলে যায়। রবিনহুড দ্য অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ার এমন সব প্রাণীকে নিয়ে সূচিকিৎসা করে বাসস্থান ও তাদের আহারের ব্যবস্থা করে থাকে। আহত বেওয়ারিশ পশু উদ্ধারকারী সংস্থার উদ্যোক্তা তরুণ অভিনেতা আফজাল খান। তারই সংগঠনের নাম হচ্ছে দ্য অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ার।
সংগঠনটির উদ্যোগে মঙ্গলবার রাজধানীর বেইলি রোডের মহিলা সমিতি সভাকক্ষে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। ‘বেওয়ারিশ আহত কুকুর-বিড়ালের অধিকার, চিকিৎসা ও আশ্রয়’ প্রসঙ্গে করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।
জয়া তার দেয়া বক্তব্যে আরো বলেন, শহরে বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করে মানুষ। মানুষের মতো উঁচু শ্রেণির জীবের এমন নির্দয় আচরণে মানুষের অবমাননা হচ্ছে। এসব প্রাণীর প্রতি সদয় হওয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য সেবামূলক কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে রবিনহুড দ্য অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ার। তিনি বলেন, সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে পশু-পাখির প্রতি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে সদয় হওয়ার। শহরের আহত কুকুর-বিড়ালের সেবার মধ্য দিয়ে এ সভার আয়োজক আফজাল হোসেন এ দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা পর্দার হিরো, কিন্তু আফজাল সত্যিকারের হিরো। আমি আমার অবস্থান থেকে তার সঙ্গে থাকার চেষ্টা করব। আমাদের সবার উচিত তাকে সহযোগিতা করা।’
সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন একটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র। রবিনহুড দ্য অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ারের কাজের সহায়তায় সেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করার ঘোষণা দেন তিনি।
অপরদিকে ঢাকা চিড়িয়াখানার পশু চিকিৎসক লুৎফর রহমান বলেন, যে বা যারা পশুর ওপর গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার আগে ভাববেন, তারা কখনোই মানুষের ওপর গাড়ি তুলে দিতে পারবেন না। আফজালের মতো মানুষ পৃথিবীতে বিরল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রবিনহুড দ্য অ্যানিম্যাল রেসকিউয়ারের উদ্যোক্তা আফজাল খান তার পরিকল্পনা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করতে চাই। এসব দল বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়ালের খাবার সংগ্রহ, তাদের উদ্ধার, চিকিৎসা সহায়তা দেবেন। তবে বর্তমানে তার গড়ে তোলা এমন আশ্রয় কেন্দ্রটির ব্যয়ভার নেয়া তার একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান। কারণ তাদের খাবার ও চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। তাই সরকারি সহায়তা পেলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত প্রাণীদের জন্য একটি আশ্রম ও চিকিৎসা কেন্দ্র করার পরিকল্পনা রয়েছে। আশ্রম না থাকায় নিজের বাড়িতে পঁয়তাল্লিশটি কুকুর-বিড়ালকে আশ্রয় দিয়েছেন তিনি।