স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: স্থগিত হওয়া গাসিক নির্বাচনের উপর হাইকোর্ট বিভাগের দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজে করা হাসান উদ্দিন সরকারের আবেদন শুনানী শেষে পূর্ন বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কাল বুধবার পূর্ন বেঞ্চে শুনানী অনুষ্ঠিত হবে।
আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, ৬মে এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গাসিক নির্বাচন ৩ মাসের জন্য স্থগিত করে চার সপ্তাহের রুল জারী করে হাইকোর্ট। এই স্থগিত আদেশের বিরুদ্ধে গতকাল বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার চেম্বার জজে আবেদন করলে আজ শুনানির দিন ঠিক করা হয়। আজ শুনানী শেষে চেম্বার জজ কোন আদেশ না দিয়ে পূর্ন বেঞ্চে কাল শুনানী করতে বলেন।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন (জিসিসি) নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি আগামীকাল বুধবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে।
আজ মঙ্গলবার চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত না করে স্থগিতাদেশ চেয়ে করা আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগে পাঠিয়ে দেন।
জিসিসি নির্বাচন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। গতকাল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতের অনুমতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখায় তার আইনজীবীরা আবেদনটি জমা দেন।
অন্যদিকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ওপর হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার চেয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম আবেদন করেছেন চেম্বার জজ আদালতে। তার পক্ষে আবেদন করেছেন অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল ইসলাম। তিনি গতকাল জানান, আবেদন ফাইল করেছি, মঙ্গলবার শুনানি হতে পারে। তবে আবেদনের ওপর কোনো নাম্বার পড়েনি। তিনি বলেন, দুটি বিষয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করা হয়েছে। প্রথমত রিটের পক্ষভুক্ত হওয়ার জন্য এবং অপরটি হাইকোর্ট থেকে গাজীপুর সিটির নির্বাচন স্থগিত করে দেয়া আদেশও প্রত্যাহার চাওয়া হয়েছে।
রোববার গাজীপুরের সিটি করপোরেশনের নির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এক রিট আবেদনের শুনানি গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত সাভারের শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ছয়টি মৌজাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট এবং গাজীপুর সিটি নির্বাচনসংক্রান্ত তফসিল কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-২), ঢাকা জেলা প্রশাসক, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৯ জনকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রোববার সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন সাভার উপজেলার আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ।
এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী বি এম ইলিয়াস বলেন, ২০১৩ সালে সাভারের ছয়টি মৌজাকে (শিমুলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়বাড়ী, ডোমনা, শিবরামপুর, পশ্চিম পানিশাইল, পানিশাইল ও ডোমনাগ) গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তখন বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এ বি এম আজহারুল ইসলাম সুরুজ আপত্তি তোলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সে আপত্তি নিষ্পত্তি না করায় তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত সুরুজের আবেদনটি নিষ্পত্তি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই ২০১৬ সালে শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে এ ছয়টি মৌজা শিমুলিয়ার মধ্যেই ছিল। পরে সে নির্বাচনে (আওয়ামী লীগ থেকে) আজহারুল ইসলাম সুরুজ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু পরে চলতি বছরে ৪ মার্চ ওই সব মৌজাকে সিটি করপোরেশনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে ফের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ফলে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ৩ এপ্রিল গাজীপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এরপরে ওই সব মৌজা গাজীপুর সিটির অন্তর্ভুক্ত হলেও স্থানীয়দের ভোটাধিকার নির্ধারণ না করা, ২০১৩ সালের ছয়টি মৌজা অন্তর্ভুক্তির গেজেট এবং চলতি বছরের ৪ মার্চের গাজীপুর সিটি নির্বাচনের গেজেট ও তফসিলের চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়।
উল্লেখ্য, তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ।