ভারতের আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা হিসাব কষছে বিরোধী শিবির। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে রাহুল গান্ধীকে প্রজেক্ট করার তুলনায় অনেক বেশি প্রয়োজন মহাজোট গড়ে তোলা এবং সেটিকে লোকসভা ভোট পর্যন্ত অটুট রাখা। আপাতত এই কৌশল নিয়েই এগনোর কথা ভাবছেন সোনিয়া গান্ধী। আর তাই মহাজোটকেই পাখির চোখ করতে গিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে আগে অযথা রাহুল গান্ধীকে প্রজেক্ট করে লড়াইয়ের ময়দানে নাও নামতে পারে কংগ্রেস। সোনিয়া চাইছেন, সবটাই যেন হয় মহাজোটের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং প্রত্যেকের সম্মতি নিয়ে। জোট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমন সম্ভাবনা দেখলেই কিম্বা সেরকম কিছু আঁচ পেলেই আর রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী প্রজেক্ট করা হবে না। তখন বলা হবে ভোটের পর একসঙ্গে বসে মহাজোটই স্থির করবে যে প্রধানমন্ত্রী পদে কাকে মনোনীত করা হবে।
এই কৌশলের প্রধান কারণ তৃতীয় ফ্রন্ট বনাম মহাজোটের যে দড়ি টানাটানি চলছে সেই অস্বস্তিকর পরস্থিতি এড়ানো। যতই দিন যাচ্ছে ততই যতটা মহাজোট বনাম এনডিএ’র লড়াই হিসাবে আগামী লোকসভা ভোটকে দেখা হচ্ছে, তার পাশাপাশি একইভাবে জল্পনায় উঠে আসছে মহাজোট বনাম তৃতীয় ফ্রন্টের নানা কথা। এই অবস্থায় বস্তুত বিজেপি বিরোধী দলগুলি দুটি ভাগে বিভাজিত হয়ে যাচ্ছে।
একটি অংশ কংগ্রেসের নেতৃত্বেই মহাজোটে কোন আপত্তি করছে না। আবার অন্য অংশটি কংগ্রেসকে একজন সঙ্গী হিসাবে চেয়ে তৃতীয় ফ্রন্টকেই চালিকাশক্তি হিসাবে দেখতে চাইছে। স্বাভাবিকভাবেই মহাজোট নাম দেয়া হলেও সেটিকে সোনিয়া গান্ধী-রাহুল গান্ধীরা আদতে ইউপিএ হিসাবেই প্রমোট করতে চাইবেন। এটা কিছু বিজেপি বিরোধী দল মেনে নিতে নারাজ। সেই কারণে মমতা ব্যানার্জি, চন্দ্রবাবু নাইডু, এম কে স্ট্যালিন, কে চন্দ্রশেখর রাও, শারদ পাওয়ারের মতো নেতারা মূলত তৃতীয় ফ্রন্ট গঠন করতে বেশি আগ্রহী। এখনও মায়াবতী এবং অখিলেশ যাদব এই নিয়ে কোনো অবস্থান প্রকাশ্যে জানাননি। কিন্তু তারা যেখানে রাজনীতি করেন সেখানে সাম্প্রতিক একের পর এক উদাহরণে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস ছাড়াও মহাজোট হচ্ছে। এবং সেই মহাজোট বিজেপিকে হারাতেও সমর্থ হচ্ছে। এমনকী কংগ্রেসকে ছাড়াই আগামী উপনির্বাচনেও বিজেপি বিরোধী একটি জোট হয়েছে। সেই জোটে এখনো কংগ্রেস যোগ দেয়নি। ফলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব লক্ষ্য করছেন আগামী বছরের লোকসভা ভোটে আঞ্চলিক যে দলগুলি ভালো ফল করবে বলে মনে করা হচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেই মহাজোটের তুলনায় তৃতীয় ফ্রন্টেই বেশি উদ্যোগী। যা কংগ্রেসের পক্ষে গভীর আশঙ্কার কারণ। যদিও ওই দলগুলির কংগ্রেস সম্পর্কে কোনো আপত্তি নেই।
সকলেই কংগ্রেসকে তৃতীয় ফ্রন্টে চাইছে। সুতরাং প্রচ্ছন্ন বার্তা এটাই যে মহাজোট মানেই রাহুল গান্ধীকেই প্রধানমন্ত্রী পদে প্রজেক্ট করা হবে, সেটা এইসব মোদিবিরোধী দল চাইছে না। সেটা আন্দাজ করেই সম্ভবত এখনই রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী সরাসরি ঘোষণা করা নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতক্ষ্যভাবে মহাজোটই লড়াই করবে বিজেপির বিরুদ্ধে। এবং সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের পরই পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে স্থির করা হবে প্রধানমন্ত্রীর নাম। এরকম একটি অবস্থান নেয়া হবে কিনা তা আলোচনা করছে কংগ্রেস। কারণ এর ফলে মহাজোটে আসতে অন্য দলগুলোর আপত্তি নাও থাকতে পারে।