ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন ঘিরে অনেক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। পছন্দের লোককে শীর্ষ পদে বসাতে ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটগুলো বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পদপ্রত্যাশীরাও পছন্দের সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ পেতে সময়-অসময়ে বাসা কিংবা অফিসে গিয়ে হানা দিচ্ছেন। আগামী ১১ ও ১২ মে দুই দিনব্যাপী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এ ছাত্র সংগঠনটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন নেতৃত্বে কে আসছেন, কারা ছাত্রলীগের হাল ধরছেন- এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। পদপ্রত্যাশীদের মধ্যেও উত্তেজনার পারদ এখন তুঙ্গে। ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে সুচারুভাবে কাজ করছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আগামী ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ছাত্রলীগের নতুন এই নেতৃত্ব আগামী নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তাই অনেক হিসেব নিকেশ কষতে হচ্ছে দলটির হাইকমান্ডকে। জাতীয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে এমন নেতৃত্ব বের করে আনতে চায় দলটির হাইকমান্ড। এ জন্য পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড, চারিত্রিক ও আদর্শিক বিষয়ে বেশ জোরালোভাবে খোঁজ খবর রাখছেন নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। দলীয় ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন তারা। পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তি, ইয়াবা ব্যবসায়, চাঁদাবাজ, ঠিকাদার, বিবাহিত, নারী কেলেঙ্কারি, অনুপ্রবেশকারীসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তারপরও অনেকেই প্রত্যাশিত পদ পেতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সিন্ডিকেট সদস্যদের বাসা বাড়ি কিংবা অফিসে গিয়ে ধর্না দিচ্ছেন। নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের গিয়ে সালাম দিয়ে আসছেন।
এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি সোহান খান, রাজীব আহমেদ রাসেল, আরেফিন সিদ্দীক সুজন, মাহামুদুর রহমান জনি, রুহুল আমিন, সুপ্রিয় কুণ্ডু রাজেশ ও আনোয়ার হোসেন আনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার মো: নিজামুল ইসলাম, আবদুর রাজ্জাক লালন ও সায়েম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুল পাঠান সেতু, বিএম এহতেশাম ও দারুস সালাম শাকিল, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, আইন সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, উপ-আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক আরিফুজ্জামান ইমরান, ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াজ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইমরান খান, প্রশিণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শামীম, স্কুলছাত্রবিষয়ক উপসম্পাদক সৈয়দ আরাফাত, সহসম্পাদক আনোয়ার হোসেন জীবন, ঢাবি ছাত্রলীগের সদ্যবিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সসহ অর্ধশতাধিক নেতা দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন।
একাধিক সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির দক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে গড়ে ওঠা কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও সোহাগ-জাকির কমিটির ওপর বেশ অসন্তোষ রয়েছে। ফলে অনেক ভেবেচিন্তেই নতুন কমিটি গঠন করতে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে বরাবরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাধান্য দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ব্যতিক্রম হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সর্বশেষ এনামুল হক শামীম ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি। এরপরে দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হননি। এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক বেছে নেয়া হতে পারে। প্রাকৃতিক নৈসর্গিক খ্যাত চিরচেনা সবুজে ঘেরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহসভাপতি পদে আছেন রাজীব আহমেদ রাসেল ও মাহামুদুর রহমান জনি। রাজীব আহমেদ রাসেলের পিতা আলহাজ আব্দুর রাজ্জাক একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং বর্তমানে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে আছেন।
আর মাহামুদুর রহমান জনির বাড়ি আওয়ামী লীগের সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এলাকা কিশোরগঞ্জে। দীর্ঘ বন্ধ্যত্ব ঘোচাতে এবার এ দু’জনের মধ্যে যেকোনো একজনকে ছাত্রলীগের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক পদে বেছে নিতে পারে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলটির হাইকমান্ডও বিষয়টি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে বলে জানা গেছে।