ভালোবাসার পাত্রীকে বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেছিল বাংলাদেশি যুবক, কিন্তু সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রেমিকার মা। আর এ কারণে প্রেমিকার মা’কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল সেই প্রেমিকের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার হাঁসখালি থানার বগুলায়। হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশি যুবককে আটক করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার তাকে স্থানীয় আদালতে তোলা হবে।
পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার বিকালে হাঁসখালি থানার অধীন বগুলা শহরের কলেজ পাড়ায় নিজের বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে রীনা অধিকারী (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর তদন্তে নেমে রতন বিশ্বাস (২৬) নামে এক বাংলাদেশি যুবককে আটক করে পুলিশ।
জানা গেছে, কয়েক মাস আগে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে রতন, এরপর বগুলা শহরে বসবাস করছিল রতন। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য শনিবার বিকালে নিজের ঘরে রীনা অধিকারীকে ডেকে পাঠায় রতন। আলোচলার সময়েই রীনার সঙ্গে তর্কাতর্কির বেধে যায় রতনের। একসময় রীনার পরনের শাড়ি দিয়েই তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে রতন হত্যা করে বলে অভিযোগ। রীনার লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য রানাঘাট মহুকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। তদন্তে নেমে সোমবার সকালের দিকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত রতনকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত রীনা অধিকারীও আদতে বাংলাদেশি। গত এক বছর ধরে স্বামী প্রদীপ অধিকারী ও মেয়েকে নিয়ে তিনি বগুলা শহরের কলেজপাড়া এলাকায় বসবাস করছিলেন।
রীনার এক আত্মীয় জানান, দুই বছর আগে বাংলাদেশে থাকাকালীন সময়েই রীনার মেয়ে লাবনী’র সাথে সম্পর্ক তৈরি হয় রতনের। কিন্তু বছর খানেক আগে বাংলাদেশ ছেড়ে রীনার পরিবার ভারতে চলে আসার কারণে সেই সম্পর্ক আর গভীরতা পায়নি। এরপর গত বছরের শেষ দিকে রতন বিশ্বাসও বাংলাদেশ থেকে এসে প্রেমিকার বাড়ির পাশেই বগুলার উত্তর ভায়না গ্রামে বসবাস শুরু করে। স্বাভাবিকভাবেই লাবনী-রতনের পুরনো সম্পর্ক ফের নতুন করে শুরু হতে থাকে। ভারতে এসে রঙের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ শুরু করে রতন এবং লাবনীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু রীনা মেয়ের বিয়ের সেই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন এবং অন্য জায়গায় মেয়ের বিয়ে দেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, ‘এই ঘটনার পরই রতন ক্ষুব্ধ হয় এবং রীনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে’।
গত শনিবার সন্ধ্যায় রীনার বাড়িতে এসে রতন তার উত্তর ভায়না গ্রামের বাসায় যাওয়ার অনুরোধ জানান। পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘রীনাও রতনের আমন্ত্রণে তার বাসায় যাওয়ার জন্য সম্মতি জানান। কারণ মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার পরেও রতনের ব্যবহারে অস্বাভাবিক কোনো আচরণ দেখা যায়নি বা ওই পরিবারের সাথে কোন শত্রুতাও করেনি। ফলে রতন সম্পর্কে কোনো খারাপ ধারণা ছিল না রীনার। সেইমতো শনিবার সন্ধ্যায় তিনি রতনের বাসায় চলে যান। আর সম্ভবত সেখানেই খুন হতে হয় রীনাকে’।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দারা জানান শনিবার সন্ধ্যায় কলেজ পাড়ায় রতনের সঙ্গে রীনাকে শেষ দেখা যায় এবং এরপরই তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। তাদের কথার ওপর ভিত্তি করেই আমরা প্রথমে রতনকে আটক করি। তাকে জেরা করতেই আসল ঘটনা সামনে আসে। নিজে মুখেই রীনাকে খুন করার কথা স্বীকার করে রতন বিশ্বাস’।
আজ মঙ্গলবার রানাঘাট মহুকুমা আদালতের অতিরিক্ত প্রধান বিচারবিভাগীয় হাকিমের এজলাসে তোলা হবে অভিযুক্ত রতনকে।