ঢাকা: শিল্পাঞ্চল খালিশপুরে গতকাল ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়েছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। অন্যদিকে নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ সকল নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক। সিপিবি’র মেয়র প্রার্থী গতকাল তার ১৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু নগরীর খালিশপুর ১০ ও ৭নং ওয়ার্ডে ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ দুটি ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। তিনি ওয়ার্ডের চিত্রালী বাজার, বঙ্গবাসী স্কুল মোড়, নতুন কলোনি, মানষি বিল্ডিং মোড়, পিপলস পাঁচতলা মোড়, লাল হাসপাতাল রোড, বিআইডিসি রোড, ভাটিয়াপাড়া এলাকা, উত্তর কাশিপুর, রায়পাড়া, মেঘনা ও পদ্মা রোড, কাশিপুর ক্রস রোড, রাজধানীর মোড়, বিএল কলেজ বাইলেন, পশ্চিমপাড়া, মালা গ্যারেজ মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। গণসংযোগ চলাকালে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
নেতাকর্মীরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান তোলেন। পাশাপাশি খুলনাকে পরিচ্ছন্ন, মাদক ও জলাবদ্ধমুক্ত এবং গ্রিন-ক্লিন সিটি গড়ে তুলতে ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থীর নজরুল ইসলাম মঞ্জু’র ভোট প্রার্থনা করেন।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি নেতা লতিফুর রহমান লাবু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট বজলুর রহমান, স ম আব্দুর রহমান, শেখ খায়রুজ্জামান খোকা, অ্যাডভোকেট ফজলে হালিম লিটন, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, শেখ আব্দুর রশিদ, আবু হোসেন বাবু, শাহিনুল ইসলাম পাখি, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেন, দিঘলিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুর রহমান মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মল্লিক, দিঘলিয়া উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মোজাম্মেল শরীফ, কাউন্সিলর আনজিরা খাতুন, কাউন্সিলর প্রার্থী পাপিয়া আক্তার পারুল প্রমুখ।
১০নং ওয়ার্ডে নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দ হাসান উল্লাহ বুলবুল, কাউন্সিলর মো. ফারুক হিল্টন, কেএম ফরিদী, নিঘাত সীমা, মিজানুর রহমান খোকন, শেখ গফুর আহম্মেদ, শেখ ফারুক আহম্মেদ, অ্যাডভোকেট এবিএম ওমর আলী, মেহেদী মাসুদ সেন্টু, সাইফুল ইসলাম সান্টু, রবিউল ইসলাম রুবেল, শাহনাজ, শাকিল আহমেদ, শরীফ কাসাফুদ্দোজা কাফি, শাকিল আরেফিন, মোবাশ্বির হোসেন শ্যামল, সামছুর রহমান, কামরুল ইসলাম, কামরুজ্জামান, কামাল হোসেন, মোয়াজ্জেম হোসেন, রশিউর রহমান রুবেল, সিরাজুল ইসলাম, বাবুল, স্বপন, নূর ইসলাম, আনাম, আব্দুল হাই কালু, বিউটি বেগম, লিটন, মফিজুর রহমান, ডিয়ার, মাসুদ, কলিম, রবিউল ইসলাম প্রমুখ।
নগরীর ৭নং ওয়ার্ডের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ পিন্টু, লিটন খান, শেখ সাদী, শেখ রিয়াজ সাহেদ, মাহবুব আলম বাদশা, আফতাব উদ্দিন বাদল, তুহিন, রফিকুল ইসলাম মল্লিক, মিজানুর রহমান মিজু, শেখ গফুর আহমেদ, নাদিম, বাপ্পি, মামুন, মান্নান শেখ, নয়ন, জাহিদ, রসুল ও আবুল কালাম প্রমুখ।
বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের ক্রিসেন্ট জুট মিল জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এ সময় সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবুর রহমান কুদ্দুস, আবু তাহের মজুমদার, শ্রমিক নেতা দ্বীন মোহাম্মদ মৃধা, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী এইচএম ডালিম, আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমুখ।
এর আগে সকালে নগরীর ২২নং ওয়ার্ডের নতুন বাজারে আগত ক্রেতা সাধারণ, বাজারের ব্যবসায়ী, বাঁশপট্টি এলাকার ব্যবসায়ী এবং কাগজী বাড়ি সংলগ্ন বেকারি শ্রমিক ও বস্তিবাসীদের মাঝে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করে ধানের শীষে ভোট চাইলেন নজরুল ইসলাম মঞ্জু। নগরবাসীর ভোটে মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি বাজারগুলোর আধুনিকায়, দ্রব্যমূল্য সহনশীল মাত্রায় রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন বলে আশ্বাস দেন। গণসংযোগকালে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও শত শত মানুষ উপস্থিত হন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার সঙ্গে প্রচারণায় অংশ নেন। এ সময় ধানের শীষের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হয়।
গণসংযোগ কর্মসূচিতে বিএনপি ও ২০দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি সভাপতি অ্যাডভোকেট লতিফুর রহমান লাবু, সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট বজলার রহমান, মোল্লা আবুল কাশেম, কাউন্সিলর প্রার্থী মাহবুব কায়সার, ইউসুফ হারুন মজনু, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আজিজা খানম এলিজা, এহতেশামুল হক শাওন, বদরুল আনাম, তরিকুল্লাহ খান, মেজবাহউদ্দিন মিজু, জাহিদ কামাল টিটু, আফজাল হোসেন পিয়াস, রিয়াজুল ইললাম, এস এম কামাল হোসেন, খান মইনুল হাসান মিঠু, জাহাঙ্গীর হোসেন, জুয়েল, আল আমিন তালুকদার প্রিন্স প্রমুখ।
নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার খালেকের
ওদিকে খুলনা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেছেন, ‘২০০৮ সালে আমি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর সিটি করপোরেশনের ১২ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করে পরিকল্পিত ভাবে খুলনার উন্নয়ন করেছি। তারই অংশ হিসেবে খুলনা নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। যে পরিকল্পনার মধ্যে নগরী পরিবেষ্টিত ২২টি খালকে চিহ্নিত করে দখলমুক্ত করা হয়েছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জলাবদ্ধতা নিরসন হয়েছিল। ২০১৩ সাল থেকে গত ৫ বছরে আবারও খুলনা শহর পিছিয়ে পড়েছে। থমকে গেছে খুলনার উন্নয়ন। তিনি নগরবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন নিশ্চিত করা হবে।’ এজন্য তিনি নৌকা প্রতীককে ভোট দিয়ে খুলনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখতে সকলের সহযোগিতা, দোয়া ও ভোট প্রার্থনা করেন। গতকাল সকালে নগরীর ১৬নং ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে তিনি এসব কথা বলেন। সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের মহল হামিদ নগর থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে বিভিন্ন এলাকায় তিনি গণসংযোগ ও স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাজী এনায়েত হোসেন, নগর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসান ইফতেখার চালু, শেখ মোশাররফ হোসেন, অসিত বরণ বিশ্বাস, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা, কাজী মুজিবুল হক, শেখ ফারুক হাসান হিটলু, শেখ শাহজালাল হোসেন সুজন, মো. নুর ইসলাম, ইউসুফ আলী খান, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে)’র সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম, কাউন্সিলর প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবিদ উল্লাহ, সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ আমেনা হালিম বেবী, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মো. বাহাউদ্দিন, আবদুল কুদ্দুস, লোকমান হাকিম, শেখ আরিফ উল্লাহ, মুকুল, মো. শাহীন, রফিকুল ইসলামসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক ১৬ ও ১৭নং ওয়ার্ডের বয়রা বাজার, রায়ের মহল, পূজা খোলা, ইসলামিয়া কলেজ রোড, বয়রা কলেজ রোড, নিউ মার্কেট এলাকা, সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকা, সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা এলাকা, সি অ্যান্ড বি কলোনি, করিমনগর সহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
গতকাল দৌলতপুর, খালিশপুর, সোনাডাঙ্গা এবং সদর থানার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি দৌলতপুর কারিগরপাড়া আল আকসা জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। এসময়ে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ নেতা অসিত বরণ বিশ্বাস, শেখ ফারুক হাসান হিটলু, এস এম আব্দুল হক, মেহেদী, সাঈয়েদুজ্জামান সম্রাট, হাবিবুর রহমান, ডা. আবদুল মান্নান, আব্দুস সালাম মোড়ল, আসলাম মোড়ল, মাজহারুল হান্নান, এসএম রাকিবুল হক, জাফরিন বিশ্বাস, নাদিম হোসেন, ইমতিয়াজ রাসেল বাবু, ইমরান মোড়ল, সোহেল বিশ্বাস, মেহেদী হাসান রাসেলসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
বাবু’র ১৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
জবাবদিহিমূলক ও স্বশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসাবে খুলনা সিটি করপোরেশনকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে ১৭ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন সিপিবি মনোনীত ও বাসদ-বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মিজানুর রহমান বাবু। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
নির্বাচনী ইশতেহারে দেয়া অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে, খুলনা সিটি করপোরেশনকে স্বশাসিত স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠা, অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন, জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ, বন্ধ কল-কারখানা চালু ও হকার পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার, প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণ, স্বাস্থ্য পরিষেবা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, দরিদ্রবান্ধব আবাসন সৃষ্টি, সুপেয় পানি, বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন, স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ, সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার, যানজট ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নগরীতে অপরাধ-সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত পরিবেশ তৈরি, নারী সমাজের বৈষম্য দূর, সকলের ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিতকরণ, শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশ ও বিনোদনের জন্য উপযুক্ত সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুন্দরবন বিনাশী সবধরনের প্রকল্প ও কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা।
ইশতেহার ঘোষণার পর অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে শংকা প্রকাশ করে বাম দলের এ মেয়র প্রার্থী বলেন, কালো টাকা, পেশিশক্তি, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার চলছে। লোক ভাড়া করে জনগণের ভোট আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও তিনি দলীয় বলয়ভুক্ত বলে মন্তব্য করে এর থেকে বেরিয়ে এসে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে দলের জেলা সভাপতি ডা. মনোজ দাস, নগর সভাপতি এইচএম শাহাদাত, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএ রশিদ, নগর সম্পাদক অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার, সুতপা বেদজ্ঞ, কাজী দেলোয়ার হোসেন, ডা. এমএ ফরিদ, জনার্ধন দত্ত নান্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।