ঢাকা: গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর আশংকা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ আশংকার ভিত্তিতে ইসি সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। দুই সিটি নির্বাচনের আগে তাই বিটিআরসি
ও মোবাইল অপারেটরদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনের রেশ ধরেই ইসি এ নিয়ন্ত্রণারোপ করতে চাইছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। বৃহস্পতিবার গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক শেষে ইসি সচিব এ তথ্য জানান। গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা নেই বলেও জানান সচিব। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিজিবি-র্যাবের মহাপরিচালকসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিভাগীয় কমিশনার, খুলনা-গাজীপুরের প্রশাসন-পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা, রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আড়াই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
ভোটেও অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর শঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অপপ্রচার ও গুজব কিভাবে বন্ধ করা যায় তা নিয়ে আমরা ভাবছি। সেজন্য কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা গুজব ছড়ানো বন্ধ করা যায় তা নিয়ে এ মতবিনিময় করা হবে। তবে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন বলে মন্তব্য করেন তিনি। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি সমপ্রচার ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করার বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে বসবেন বলে জানান ইসি সচিব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগে কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। আমরা চাই- মিডিয়া ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে যেন ভুল বুঝাবুঝি না হয়। সে জন্য গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে না বলে জানান ইসি সচিব।
প্রয়োজনে র্যাব-পুলিশ-বিজিবি’র অতিরিক্ত সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হবে উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে কোনোভাবেই সেনা মোতায়েন করা হবে না-এ সিদ্ধান্ত রয়েছে কমিশনের। আগেও বলেছি আমরা, বিজিবি-র্যাব-পুলিশসহ আধা-সামরিক বাহিনী থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক। প্রয়োজনে দেশের যেকোনো এলাকা থেকে আরো বেশি সংখ্যক নিরাপত্তা সদস্য আনা হবে। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ও সিটির প্রার্থীরা বরাবরই এ দুই নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে এসেছে। সিইসি’র সঙ্গেও ইতিমধ্যে দলটির প্রতিনিধি লিখিত প্রস্তাব দিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, কমিশনের প্রতি তাদের (বিএনপি) আস্থা রয়েছে বলেই ভোটে অংশ নিচ্ছে।
আস্থা না থাকলে কেমন হবে? তারা তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। সিইসি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দল ও প্রার্থীসহ সবাইকে বলেছে-প্রচারে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা হবে। অভিযোগ থাকলেও গাজীপুরের এসপি হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহার না করার ইঙ্গিত দিয়েছেন ইসি সচিব। গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহারে বিএনপি’র দাবির বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আসতে হবে। সেখানে তিনি (এসপি) অসহযোগিতা করছেন কিনা দেখতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার বিষয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা বা কেউ কোনো অসহযোগিতা করার রিপোর্ট আসেনি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত ২৭ দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি হয়েছে বলে প্রতিবেদন আসেনি বলে জানান তিনি। আইনশৃঙ্খলা বৈঠকেও বাহিনী প্রধানরা সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন সচিব। দুই সিটিতে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়নি বলে জানান তিনি।