সরকারি চাকরিজীবীরা এবার মাত্র ৫ শতাংশ সুদে গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন। স্কেল ভেদে এ ঋণের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা। ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ঋণ পাওয়ার শর্তের মধ্যে একজন সরকারি চাকুরের সর্বোচ্চ বয়স হতে হবে ৫৮ বছর। গৃহ নির্মাণের সুদের হার ৫ শতাংশ হলেও মূল সুদের হার হবে ১০ শতাংশ হারে। সরকারি চাকুরেরা ৫ শতাংশ সুদ প্রদান করবেন, বাকি ৫ শতাংশ সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে। এই সুদ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। সরকারি গৃহনির্মাণ ঋণদানকারী একটি সংস্থা এবং রাষ্ট্রীয় চারটি ব্যাংকের মাধ্যমে এ ঋণ নেয়া যাবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটির ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০১৮’-এর খসড়ায় এসব কথা বলা হয়েছে। এ খসড়া নিয়ে একটি চূড়ান্ত বৈঠক হবে কাল বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে। অর্থ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ বৈঠকে অন্তত ১৫ জন সচিব উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন শেষে দেশে ফেরার পর নীতিমালাটির খসড়া চূড়ান্ত হবে। অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন নেয়ার পর নীতিমালাটি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।
সূত্র জানায়, সামরিক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি, পৃথক বা বিশেষ আইন দ্বারা সৃষ্ট প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত কর্মচারীরা এ নীতিমালার আওতাভুক্ত হবেন না।
জানা গেছে, ১৯৮২ সালে প্রথম সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণসুবিধা চালু করা হয়। চাকরিজীবীদের তখনকার মূল বেতনের ৪৮ মাসের সমপরিমাণ হিসাব করে এক লাখ ২০ হাজার টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ দেয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছিল, যা ৪৮টি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। এরপর চাকরিজীবীদের বেতন বাড়লেও এ ঋণসীমা বাড়েনি। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এটি বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
সূত্র জানায়, ১০ শতাংশ সরল সুদে রাষ্ট্রায়ত্ত যেকোনো ব্যাংক ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফিন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) থেকে এ ঋণ নেয়া যাবে। একই সাথে এ ঋণ পাওয়া যাবে সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক থেকেও। এ ১০ শতাংশ সুদের মধ্যে ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে সরকার। বাকি ৫ শতাংশ পরিশোধ করবেন ঋণগ্রহীতা চাকরিজীবী। নতুন এ ঋণ সুবিধা ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।
সূত্র জানায়, নীতিমালার আওতায় ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ পাবেন উপসচিব থেকে সচিব পদমর্যাদা বা জাতীয় বেতন স্কেলের পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তারা। তারা ২০ বছর মেয়াদে এ ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন। তবে সর্বনিম্ন ১৮ থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পাবেন। চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এ ঋণ নিতে পারবেন। সর্বোচ্চ ৫৮ বছর বয়স পর্যন্ত এ ঋণ নেয়া যাবে।
নতুন নীতিমালার আওতায় সরকারের প্রায় ১২ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণের সুবিধা নিতে পারবেন। এককভাবে এ ঋণ সুবিধা নেয়ার পাশাপাশি নীতিমালায় আবাসিক বাড়ি করার জন্য গ্রুপভিত্তিক ঋণও নেয়া যাবে। ফ্ল্যাট কেনার জন্যও এ ঋণসুবিধা পাওয়া যাবে। তবে সেটা হতে হবে সম্পূর্ণ তৈরি ফ্ল্যাট।
ঋণের সর্বোচ্চ সিলিং নির্ধারণ সম্পর্কে নীতিমালায় বলা হয়েছে, বেতন স্কেল অনুযায়ী সর্বোচ্চ যে সিলিং সরকার নির্ধারণ করে দেবে, সেটি এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের যথাযথ পদ্ধতিতে যে পরিমাণ ঋণসুবিধা নির্ধারণ করবে, তার মধ্যে যেটি কম, সে পরিমাণ ঋণ দেয়া হবে। ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার জন্য ডেট ইক্যুইটি রেশিও হবে ৯০:১০। অর্থাৎ ফ্ল্যাট কেনা বা নিজস্ব জমিতে বাড়ি নির্মাণের জন্য কেউ নিজস্ব উদ্যোগে ১০ টাকা খরচ করলে ৯০ টাকা ঋণ পাবেন। ঋণের সুদ সম্পর্কে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মচারীদের গৃহনির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ। এটি হবে সরল সুদ এবং সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা হবে না।