রান্নার কাজে ব্যবহার্য উপাদানগুলোর মধ্যে রসুন একটি অপরিহার্য উপাদান। তবে এর গন্ধ ও স্বাদের জন্য কাঁচা অবস্থায় এই উপাদানটিকে অনেকেই পছন্দ করে না। তবে আপনি জানেন কি? এই ছোট উপাদানটির অনন্য গুণের কথা।
বহুকাল আগে থেকেই রসুন ব্যবহৃত হয়ে আসছে নানারকম রোগে, এমনকি ক্যান্সারের চিকিৎসাতেও। সর্বকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী রোগ ক্যান্সার নির্মূল করতে কেবল প্রচুর পরিমাণ রসুন প্রয়োজন, এমনটাই জানিয়েছেন প্রাচীন আমলের গ্রিক স্বাস্থ্যবিদ হিপোক্রেটিস (খৃস্টপূর্ব ৪৬০-৩৭৭)।
আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় রসুন কার্যকারী একটি মশলা। এর গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। ক্যান্সার ছাড়াও নানারকম রোগ ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে রসুনের জুড়ি নেই।
পাকস্থলীতে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ক্যান্ডিডা ছত্রাকের সংক্রমণ, দেহে নানারকম বিষাক্ত বা দূষিত উপাদান (টক্সিফিকেশন), মাইকোটক্সিন স্ট্যাফিলোককাস অরিয়াস, প্রাণঘাতী রোগ এইডসের বাহক ভাইরাস এইচআইভি’র সংক্রমণ, যক্ষ্মা, নানারকম ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ, হার্পস সিমপ্লেক্স এবং অন্যান্য অসংখ্য প্রদাহ প্রতিরোধে রসুনের জুড়ি মেলা ভাঁড়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে পাঁচ থেকে ছয়টি করে রসুনের কোয়া খেতে হবে রোগীকে। তবে এক্ষেত্রে প্রতিবার এই পরিমাণ রসুন গ্রহণের আগে রসুনের কোয়াগুলো বেটে বা ভর্তা করে বা ছোট টুকরো করে কেটে ১৫ মিনিট রেখে তবেই খেতে হবে। এর ফলে এই সময়ে ক্যান্সারবিরোধী শক্তিশালী উৎসেচক বা এনজাইম তৈরি হওয়ার সুযোগ পায়।
আপনি চাইলে রসুন খেতে পারেন কাঁচা অবস্থায় কিংবা রান্না করে। এছাড়াও সকালের নাশতায়, দুপুরের খাবারে, স্যান্ডউইচের সঙ্গে, প্রিয় ফ্লেভারের সস বা মশলার সঙ্গে মিশিয়ে, যেকোনোভাবেই রসুন এর স্বাদে ভিন্নতা এনে খেতে পারেন। তবে খাবারের বিকল্প হিসেবে কখনোই রসুন খাবেন না। খাবারের বিকল্প হিসেবে রসুন গ্রহণ করলে তাতে ক্যান্সারবিরোধী উপাদানগুলো তৈরি হয় না, এমনটাই বলে থাকেন গবেষকরা।
রসুনের ওপর দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনে রয়েছে রসুনের ওপর গবেষণার হাজার হাজার বায়োমেডিক্যাল তথ্যভাণ্ডার, যা জানলে আপনি চমকে যাবেন। মেডিলাইনে চার হাজার ২৪৫টিরও বেশি গবেষণা রয়েছে রসুন ও এর উপকারিতার ওপর ভিত্তি করে।
আরো বেশি চমকপ্রদ এসব তথ্যের ওপর গবেষণার ফলাফল। বিশেষ করে কার্ডিওভাস্কুলার বা হৃদরোগ সম্পর্কিত নানা জটিলতা ও ক্যান্সারসহ দেড় শতাধিক অসুখবিসুখ প্রতিরোধে ও চিকিৎসায় রসুন দারুণ কার্যকরি, এমনটাই জানা যায় গবেষণার ফলাফলে।
সস্তা, সহজলভ্য, নিরাপদ ও খাবারে স্বাদবর্ধক প্রাকৃতিক ঔষধ ও মশলাজাতীয় উপাদান রসুন। রসুন বিবেচনার দিক থেকে ‘জীবন বাঁচানো’ উপাদান হিসেবে গন্য করা হয়। অন্যদিকে এটি স্বর্ণের চাইতে কিছু কম মূল্যবান নয় গুরুত্বের দিক থেকে।