ঢাকা: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ দিলে ভোটের মাঠের পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তে সংসদের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো বৈষম্যের শিকার হবে। এতে করে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হবে। সিটি করপোরেশনের ভোটে প্রচার-প্রচারণার সুযোগ দিতে আচরণবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্থানীয় নির্বাচনে এমপিরা প্রচারণার সুযোগ চেয়ে প্রস্তাব দেয়ার পরে এক সপ্তাহের মাথায় গত বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় আচরণবিধি সংশোধনের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বে আইন ও বিধিমালা সংস্কার কমিটিকে এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দিতে বলেছে কমিশন।
এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিরা প্রচারের সুযোগ পেলে তার প্রভাব হবে ভয়াবহ। যেসব দলের এমপি নেই তারা বৈষম্যের শিকার হবেন। এটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হবে। তিনি বলেন, এমপিরা নিজ এলাকায় প্রচণ্ড প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী। তারা প্রচারের সুযোগ
পেলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের লেশমাত্র থাকবে না। ২০০৯ সালে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন কমিশন এমপিদের নির্বাচনী প্রচারের বাইরে রাখার বিষয়টি বিধিমালায় যুক্ত করে। পরে ২০১৫ সালে দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়া না দেয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তৎকালীন কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন। প্রাথমিকভাবে মন্ত্রী-এমপিদের নাম উল্লেখ না করে সরকারি সুবিধাভোগীদের প্রচারের (সরকারি যানবাহন, প্রচারযন্ত্র বাদ দিয়ে) সুযোগ করে দিয়ে খসড়া তৈরি করে। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে সরকারি সুবিধাভোগীদের সফর ও প্রচারণায় অংশ নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মন্ত্রী-এমপিদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি করা হয়। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর কুমিল্লা সিটি ভোট সামনে রেখেও আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একজন বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন বেশি নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে সরকারি দলের প্রতি বেশি নিষ্ঠুর আচরণ করছে। এবারে গাজীপুর ও খুলনার সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রী-এমপির ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণারোপ না করার দাবি জানায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চার সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছিলেন, সামনে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন রয়েছে। মন্ত্রী-এমপিদের চলাফেরার ওপরে যাতে নিয়ন্ত্রণ না করা হয়। যাতে স্বাভাবিক কাজে বাধা না দেয় তা দেখতে বলেছি। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আচরণবিধি নিয়ে বাস্তবে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আচরণবিধি যাতে আবার এমন হয়ে না দাঁড়ায় যে, নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে। নির্বিঘ্নে নির্বাচন করার জন্য যেটুকু দরকার সেটুকুই যেন তারা রাখেন। তিনি বলেন, মন্ত্রীদের গতিবিধি এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় যারা এমপি আছেন, তারা এখন (নির্বাচনের সময়) এলাকায় যেতে পারবেন না। এক্ষেত্রে অসুবিধা হয়, তারা তো ওইসব নগরে বাস করেন। যেমন গাজীপুর-খুলনার অধিবাসী অনেক এমপি আছেন। কমিশন বৈঠকে আইন সংশোধন নিয়ে আলোচনার পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত ক্ষমতাসীনদের চাপে নয়। যে কোনো রাজনৈতিক দল ইসির অংশীজন। পরামর্শ ও আলাপ-আলোচনা করে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো ইসি বিবেচনা করে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, এটা ঠিক হবে না। এটা আগে নিষিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। বিএনপির তো মন্ত্রী-এমপি নেই। সুতরাং ব্যাপারটা একতরফা হয়ে যাবে। এতে করে প্রার্থীদের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না।