ঢাকা: উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে গেল সপ্তাহে সাক্ষাত হয়েছে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ’র প্রধান মাইক পম্পেওর। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প টুইটারে এই ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, কিম জং উনের সঙ্গে ‘ভালো সম্পর্ক’ গড়ে তুলেছেন পম্পেও। তবে তার আগে গণমাধ্যমই এই সংবাদ জানায় যে, পিয়ংইয়ং-এ গোপন বৈঠক হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে। এই সংবাদ নিশ্চিত করে ট্রাম্প আরও বিশদ জানালেন। তিনি বলেন, ওই গোপন বৈঠক ‘বেশ মসৃণভাবে’ শেষ হয়েছে।
২০০০ সালের পর এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। আসছে জুনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত হতে যাচ্ছে কিম জং উনের। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, বৈঠকের খুটিনাটি নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করছে। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ইঙ্গিত দিয়েছে, কোরিয়া উপদ্বীপে দীর্ঘদিনের সংঘাত অবসানে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রণয়নে কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহে কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাত করার কথা রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের। বিবিসির খবরে বলা হয়, সিআইএ প্রধান পম্পেওকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করার পরেই তিনি কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। ওই বৈঠকে কী আলোচিত হয়েছে, তা নিয়ে তেমন কিছুই জানা যাচ্ছে না। শুধু এটুকুই আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে যে, এই সাক্ষাত ছিল ট্রাম্প ও কিম জং উনের আসন্ন বৈঠকের প্রস্তুতির অংশ। আসছে সপ্তাহে পম্পেও শীর্ষ মার্কিন কূটনীতিক হিসেবে সিনেটের অনুমোদন পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এই রক্ষণশীল প্রার্থীর বিরুদ্ধে ডেমোক্রেট দলের বিরোধীতা বেশ জোরালো। সিনেটের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি পম্পেওর মনোনয়নের বিষয়টি বিচার করবে। এই কমিটির শীর্ষ ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর রবার্ট মেনেন্ডেজ বলেন, তিনি মনে করেন না পম্পেওর অতীত অবস্থান মার্কিন মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটায়। কট্টরপন্থী সিআইএ প্রধান পম্পেও সমকামী বিয়ের বিরোধী বলে পরিচিত। এছাড়া তিনি ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিতর্কিত অনেক মন্তব্য করেছেন। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে অতীতেও কূটনীতিকরা উত্তর কোরিয়া সফর করেছেন। পিয়ংইয়ং-এর সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কথিত ‘ব্যাক-চ্যানেল’ ব্যবহার করা হয়।
পম্পেওর আগে শেষবার শীর্ষস্থানীয় মার্কিন কর্মকর্তা হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে সাক্ষাত করেন মেডেলিন অলব্রাইট। বিল ক্লিনটনের আমলে অলব্রাইট ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি সেবার উত্তর কোরিয়া সফরে গিয়ে সাক্ষাত করেন দেশটির তৎকালীন নেতা কিম জং-ইলের সঙ্গে, যিনি বর্তমান নেতার পিতা। এছাড়া ২০১৪ সালে বারাক ওবামার সময়ে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের প্রধান জেমস ক্ল্যাপার গোপনে উত্তর কোরিয়া সফর করেন। তিনি উত্তর কোরিয়ায় আটককৃত দুই মার্কিন নাগরিকের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করতে দেশটিতে গিয়েছিলেন। তবে তখন কিম জং উনের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়নি। গত মাসে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের বৈঠকের প্রস্তাব গ্রহণ করে
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চমকে দিয়েছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। সত্যি সত্যি শেষ পর্যন্ত ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে, তা হবে উত্তর কোরিয়ার কোনো নেতার সঙ্গে প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাত। ট্রাম্প বলেছেন, জুনের প্রথম দিকে বা তারও কিছুটা আগে বৈঠক হতে পারে। এছাড়া বৈঠকস্থল হিসেবে বেশ কয়েকটি স্থান বিবেচনায় রয়েছে। বিশ্লেষকরা অনুমান করছেন, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যকার অসামরিকীকৃত অঞ্চল, তৃতীয় কোনো এশিয়ান বা নিরপেক্ষ কোনো ইউরোপিয়ান দেশে এই বৈঠক হতে পারে।