গুমের ঘটনার সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা আছে। কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ ভূমিকা থাকলে গুম-খুনের ঘটনা ঘটত না। আর সরকারের নিষ্ক্রিয়তায় এ ধরনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে এসব কথা বলেন আলোচকরা। সংলাপের এ পর্বে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ও ইংরেজি দৈনিক অবজারভারের সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, বেসরকারি সংগঠন উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।
১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে শনিবারের বিবিসি সংলাপ ছিল একটি বিশেষ পর্ব। এ পর্বে প্রথম প্রশ্ন ছিল, সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলো গুমের ঘটনায় অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়নি। গুমের ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে কি রাষ্ট্রের এক ধরনের নিষ্ক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে? জবাবে ফরিদা আখতার বলেন, এসব ঘটনায় রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা আছে। কারণ যে ঘটনাগুলো ঘটছে, তাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা লক্ষ করা যাচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা তো আছেই। আমি এসব গুমের ঘটনাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলব না, বলব মানবাধিকার হরণ। গুমের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে তিনি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন।
ফাওজিয়া করিম ফিরোজ বলেন, ঢালাওভাবে সবাই গুম হয়ে গেছে বলা যাবে না। মানবাধিকার রক্ষায় সরকার কখনো গুরুত্ব দিচ্ছে, আবার কখনো দিচ্ছে না। আরো জোরালো অবস্থান নিতে হবে, কিন্তু সেটা হচ্ছে না। মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর বলেন, সরকারি বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পৃক্ততা বা সাহায্য ছাড়া কোনো গুম-খুন হতে পারে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সরকার নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে। সরকারের এ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তারা গুম-খুন করছে।
তবে গুম-খুন হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করলেও এতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কথা মানতে চান না ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বলেন, গুম হচ্ছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে সরকার নিষ্ক্রিয় এটা সঠিক বক্তব্য নয়। এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার আগে কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কখনো এভাবে বিচার হয়নি বলেও উল্লেখ করেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তদন্ত প্রসঙ্গে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো কোনো তদন্তকারী দলের সঙ্গে যুক্ত নয়। তারা কেবল বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন সংকলন করে প্রকাশ করে। তারা যদি নিজেরা অনুসন্ধান করে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারত, তাহলে আরো ভালো হতো।
বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন ও বিবিসি বাংলা যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন।