কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলের এক ছাত্রীকে অমানবিক নির্যাতনের দায়ে বহিষ্কৃত নেত্রীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিপীড়ক ঢাবির কবি সুফিয়া কামাল হল শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইশরাত জাহান এশাকে এ শুভেচ্ছা জানান তারা।
এশাকে ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছেন এমন একটি ছবি ফেসবুকে টাইমলাইনে পোস্ট করেন ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা। ছবির ক্যাপশনে তিনি লিখেন, ‘‘আমরা সাবেক ছাত্রলীগ…এশার পাশে…’’।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জয়দেব নন্দী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান তারেক, শারমিন সুলতানা লিলি, শামসুল কবির রাহাত, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফরিন নুসরাত, ঢাবি শাখার সাবেক সভাপতি ওমর শরীফ প্রমুখ। এর মধ্যে ওমর শরীফ একজন কোটাধারী।
এর আগে গত ১০ এপ্রিল রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়ায় হলের এক ছাত্রীকে রুমে পায়ের রগ কাটার অভিযোগ ওঠে। এশার বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তাতক্ষণিক হলের বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা এশাকে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং তার বিচার দাবি করে। পরে
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে রাতেই এশাকে হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করে।
এছাড়া সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ থেকেও এশাকে বহিস্কার করা হয়।
এদিকে সুফিয়া কামাল হলে সংগঠিত ঘটনা তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে এ তদন্ত কমিটি গঠনের পর সুফিয়া কামাল হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক কাজ করছে। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন তদন্তের নামে এশার বহিষ্কারাদেশ তুলে নিতে চায় ছাত্রলীগ।
বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ সভাপতি সাইরুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
ছাত্রলীগের এ তদন্ত কমিটিতে রয়েছে মাদক ব্যবসায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নিশীতা ইকবাল নদী। গত ৬ ফেব্রুয়ারি মাদক ব্যবসা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে উঠে আসে এই নেত্রীর নাম।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের ৩৮ জনের একটি তালিকার উল্লেখ দিয়ে বলা হয় এর মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ২০ জন নেতাকর্মীর নাম। এর মধ্যে রয়েছে ছাত্রলীগ নেত্রী নদী।
এর আগে ২০১৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের সভাপতি থাকাকালে নিশীতা ইকবাল নদীর বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসা এবং অধঃস্তন নেত্রীকে অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগ আসে। ৩১ জানুয়ারি ২০১৫ সালে অপর একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন আনুযায়ী ওই হলের ছাত্রলীগের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক ইসরাত জাহান সোনালী নদীর বিরুদ্ধে ভিসি ও প্রক্টর বরাবর অভিযোগ করেন। অভিযোগে দীর্ঘদিন থেকেই ইয়াবা ব্যবসা এবং ওই শিক্ষার্থীকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতে চাপ প্রয়োগের কথা উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে একাধিকবার ফোন করেও তাদের মন্তব্য জানা যায়নি।
গত মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে ঢাবির সুফিয়া কামাল হলে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোরশেদা আক্তারকে হল ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা ডেকে নিয়ে ব্লেড দিয়ে পায়ের রগ কাটার অভিযোগ করেন হলের ছাত্রীরা। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে হলের ছাত্রীরা ঐক্যবদ্ধভাবে এশাকে প্রতিহত করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে জুতার মালা পড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা ছুটে এসে ভোর রাত পর্যন্ত বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা এশাকে বহিষ্কার ও রাজনীতি মুক্ত হল ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ করে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। সাথে সাথে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী তাকে হল এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা জানান। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাকে ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
ঘটনাটির তিনদিন পর অনাকাঙ্ক্ষিত এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ছাত্রলীগ।
ওই হলের ছাত্রীদের অভিযোগ, হল সভাপতি এশা আগেও সাধারণ ছাত্রীদের নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করতেন। তবে এতদিন ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি।