অন্ধত্ব জয়ের প্রত্যয় ১৬ তরুণের

Slider বিচিত্র

f0f33adec20f68edfcc1386cea8b49dd-5ace3ae3c87c7

কক্ষের ভেতরে সবাই পড়াশোনায় ব্যস্ত। একজন শিক্ষক তাঁদের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত। শিক্ষার্থীদের কেউ মুঠোফোনে শুনে শুনে পড়ছেন। আবার কেউ স্পর্শ করে আত্মস্থ করছেন বইয়ের লেখা। কারণ তাঁরা দেখতে পান না। কিন্তু তাই বলে পিছিয়ে থাকবেন কেন? তাঁরা জ্ঞানের আলোয় দেখতে চান পৃথিবী।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আবদুল্লাহ আল আমিনের বাড়ি টাঙ্গাইলের কোনরা গ্রামে। ২০১৬ সালে পাবনার দোগাছি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এরপর কম্পিউটারে টাইপিং, ব্রাউজিং—সব শিখেছেন। এবার পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে এইচএসসি দিচ্ছেন।
মনিরুল ইসলামের বাড়ি পাবনার চাটমোহরের কুমারগাড়ি গ্রামে। তিনিও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ১৬ তরুণ এসব করেছেন মনের জোরে। একসঙ্গে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্ধত্বকে জয় করার প্রত্যয় নিয়ে পাবনার বিভিন্ন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। আর তাঁদের আশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে সহযোগিতা করছে পাবনার মানবকল্যাণ ট্রাস্ট। এই ১৬ জনের মধ্যে বেশির ভাগ জন্ম থেকে অন্ধ।
অন্য পরীক্ষার্থীরা হলেন টাঙ্গাইলের মমিনুর রহমান, ময়মনসিংহের চরশ্যামারামপুর গ্রামের মোজাম্মেল হক, রাজশাহীর বাঘা গ্রামের মনিরুজ্জামান, দিনাজপুরের নাগরিসারি গ্রামের আবদুল আজিজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভদ্রগাছা গ্রামের শাহাদত হোসেন, নরসিংদীর গেথিপাশালী গ্রামের মো. আবদুল্লাহ, পঞ্চগড়ের শিকারপুর গ্রামের রোকনুজ্জামান, জয়পুরহাটের শমসাবাদ গ্রামের মোহাম্মদ আলী, কুড়িগ্রামের রাজারহাট গ্রামের ইমরান হোসেন, টাঙ্গাইলের বেগুনটাল গ্রামের আবুল কালাম আজাদ, গোপালগঞ্জের ইফতেখার মৃধা, নরসিংদীর শিহাবুদ্দিন ভূঁইয়া, জামালপুরের গোলাপ মল্লিক ও বরিশালের হুমায়ুন কবির।
সবাই একই ছাদের নিচে বাস করছেন। পড়েছেন পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ ও শহীদ এম মনসুর আলী কলেজে। সবাই আশা করছেন এইচএসসিতেও তাঁদের ফলাফল ভালো হবে। এসএসসিও তাঁরা এই ট্রাস্টের অধীনে দিয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কীভাবে তাঁরা এলেন মানবকল্যাণ ট্রাস্টের ছায়ায়? পরীক্ষার্থীরা বলেন, তাঁরা লোকজনের কাছ থেকে শুনে যোগাযোগ করেছেন। আবার মেধাবী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের কথা শুনে ট্রাস্টের লোকজন তাঁদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
রাজশাহীর মনিরুজ্জামান বলেন, কখনো শুনে শুনে বা কখনো ব্রেইলের বই স্পর্শ করে পড়েন। সার্বক্ষণিকভাবে ট্রাস্টের শিক্ষক তাঁদের সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা একে অপরকে জানা বিষয়গুলো শিখিয়ে দেন। ফলে পড়তে তাঁদের খুব বেশি সমস্যা হয় না।
পরীক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে থাকা শিক্ষক আবদুল মালেক বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সবাই পড়ায় খুব মনোযোগী। তবে তাঁদের শ্রুতলেখক ও নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা পোহাতে হয়। চলতি বছর এই জটিলতার জন্য সাত শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। পরীক্ষা শুরুর এক দিন আগে পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কায়সার ইসলামের সহযোগিতায় তা সমাধান হয়েছে। এখন তাঁরা স্বচ্ছন্দে পরীক্ষা দিতে পারছেন। সবার পরীক্ষা ভালো হচ্ছে।
দিনাজপুরের আবদুল আজিজ বলেন, এসএসসিতে জিপিএ-৪.৩৩ পেয়েছেন। এবার প্রস্তুতি আরও ভালো। আরও ভালো ফলের আশা করছেন।
ময়মনসিংহের মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও আমরা হার মানতে চাই না। সাধারণ মানুষের মতোই পড়ালেখা করে সমৃদ্ধ মানুষ হতে চাই। সে লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পড়ালেখা শেষে একটা ভালো কাজ পেলে সব কষ্ট সার্থক হবে।’
মানবকল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও প্রবীণ শিক্ষক মো. আবুল হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক নানা জটিলতার মধ্যে তাঁরা প্রতিবন্ধী ছেলেদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া আরও ৭২ জন শারীরিক, দৃষ্টি ও বাক্‌প্রতিবন্ধী ট্রাস্ট থেকে পড়াশোনা করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *