মেহের আফরোজ শাওন একাধারে অভিনেত্রী, কণ্ঠশিল্পী ও নির্মাতা হিসেবে সুনাম রয়েছে তার। আছে আরো এক পরিচয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের পত্নী। চলমান কোট সংস্কার ইস্যু নিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে তিনি মুখ খুলেছেন। সেই স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:-
আমি খুবই স্বল্প জ্ঞানের মানুষ…
স্থাপত্যকলায় টুকটাক কাজ করি, মাঝে মধ্যে নাটক বানানোর চেষ্টা করি.., ভালো দুই-তিনটা সিনেমা বানানোর স্বপ্ন দেখি.., আর প্রিয়জনদের জন্য একটু আধটু গান গাই…
এই কাজগুলোর কোনটাই খুব বেশি ভালো পারি না… ঐ যে বলে না- “Jack of all trades, master of none”…
কিন্তু একটা কাজ আমি খুব ভালো পারি… তা হল `পরিশ্রম`…
আমার দু`টা ছোট বাচ্চা আছে… বাবা হারানো এই ছেলে দু`টাকে আমি ঠিকঠাক মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি… পড়াশোনায় মোটামুটি ভালো করতে বলার পাশাপাশি যে কয়টি বিষয় তাদের মস্তিষ্কে গ্রামাফোনের ভাঙা রেকর্ডের মত গেঁথে দিতে চাই তা হল-
* সবার জন্য মায়া থাকতে হবে…
* সব শ্রেণির মানুষের সাথে একই রকম ভালো ব্যবহার করতে হবে…
* তাদের কোন কর্মকাণ্ড যদি মানুষের উপকারে আসে তবে তাদের মা হিসাবে আমি একটু হলেও গর্বিত বোধ করব, তবে তাদের কোন কর্মে যেন কেউ কোনদিন কষ্ট না পায় কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়…
* নারীদের সম্মান করতে হবে… ভাই হয়ে, বন্ধু হয়ে, সহযাত্রী হয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে…
* পৃথিবীর যে দেশেই যাক না কেন বাংলাদেশকে ভালবাসতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে…
* শুদ্ধ বাংলা বলতে, পড়তে এবং লিখতে জানতেই হবে…
* পরিশ্রম, পরিশ্রম এবং পরিশ্রম…
তাদের দাদাজান, ফয়জুর রহমান আহমেদ, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ… তাদের বাবা হুমায়ূন আহমেদ, বড় চাচা মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং ছোট চাচা আহসান হাবীব নিজ মেধা এবং পরিশ্রমে নিজ নিজ অবস্থান তৈরি করেছেন… তাদের তিন ফুপুর কেউ মুক্তিযোদ্ধা কোটা`য় কোনও সুবিধা নিয়েছেন বলে শুনিনি…
এরকম আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের কথা জানি যারা কোটা ছাড়াই নিজ মেধায় সম্মানের জায়গায় পৌঁছেছেন…
হ্যাঁ… মুক্তিযোদ্ধার পরিবার মানেই কোটা`র আশায় বসে থাকা মেধাহীণ কিছু মানুষ নয়…
আবার এমনটা কখনোই ভাবতে বা বলতে চাই না যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার তাদের প্রয়োজনে রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধাগুলো থেকে বঞ্চিত হোক…
`মুক্তিযুদ্ধ` বাংলাদেশের সবচেয়ে অহংকারের অধ্যায়…
`মুক্তিযোদ্ধা` বাঙালি জাতির সর্বোচ্চ সম্মানের নাম…
এই অহংকার, এই সম্মান আমরা সবাই বজায় রাখতে চাই…
এই অহংকার, এই সম্মান বজায় রাখার জন্যই আমি কোটা পদ্ধতির সুষ্ঠ সংস্কার আশা করি…
বিশেষ ভাবে দ্রষ্টব্যঃ `নারী কোটা` কি নারীদের জন্য চরম অসম্মানজনক নয়..? `নারী নির্মাতা`, `নারী সাংবাদিক`, `নারী ফুটবলার` এই সম্বোধন গুলোর পাশাপাশি `নারী কোটা` বাদ দেয়ার পক্ষে আমি মত দিলাম…