মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক ছাত্রীকে নির্যাতন করেছেন ওই হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান। এমন অভিযোগ করেছেন হলের সাধারণ ছাত্রীরা। তাঁদের দাবি, হলের সভাপতি ইফফাত জাহান রাতে বোটানি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মোর্শেদা আক্তারকে নিজের রুমে নিয়ে মারধর করেন। একপর্যায়ে মোর্শেদার পা ধারালো বস্তুর আঘাতে কেটে যায় বলে ছাত্রীরা অভিযোগ করেন। ছাত্রীদের অনেকে বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রীদেরকে আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই রুমে নিয়ে মারধর করেন হল সভাপতি। ভয়ে এতদিন কেউ মুখ খোলেনি।
এই ঘটনার পর মধ্যরাতেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযুক্ত ওই নেত্রীকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। ঘটনা তদন্ত করা হবে বলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আবিদ আল হাসান এ বিষয়ে বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী কাউকে বকা দেওয়া হয়। ওই ছাত্রী নিজেই কাচে লাথি মেরে পা কেটে ফেলেন। এটাকে ইস্যু করে অনেকে গুজব ছড়িয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
ছাত্রী নির্যাতনের বিষয়ে হলের প্রাধ্যক্ষ রিজওয়ানা রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানি ঘটনাস্থলে আসেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সব আবাসিক শিক্ষকেরা ছাত্রীদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ছাত্রীরা কেউ কথা শুনছে না। অভিযুক্ত ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরপরও কেউ আন্দোলন করলে তারা অন্য কিছু চায় বলে তিনি মন্তব্য করেন। চলে যাওয়ার সময় ছাত্রদের তোপের মুখে পড়েন প্রক্টর।
পরে ইফফাত জাহানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের কথা নিশ্চিত করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান।
আহত মোর্শেদা আক্তার সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে যান। সেখান থেকে তিনি তাঁর আত্মীয়ের বাসায় চলে যান। সে সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাননি তিনি।
এ দিকে নির্যাতনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ ছাত্রীরা রুম থেকে বেরিয়ে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। সে সময় তাঁদের অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সভাপতির বহিষ্কার দাবি করে স্লোগান দিতে শোনা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রী নির্যাতনের খবর ও ছবি ছড়িয়ে পড়লে রাত দেড়টা থেকে দুইটার মধ্যে বিভিন্ন হল থেকে প্রায় হাজার খানেক ছাত্র সুফিয়া কামাল হলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে দাবি করেন, মল চত্বরের সামনে ছাত্রলীগ নেতারা তাঁদের এখানে আসতে বাধা দিয়েছেন। পরে রাত ৪টার দিকে অভিযুক্ত ছাত্রীর বহিষ্কারের খবর পেয়ে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।