প্রধানমন্ত্রী যা করতে বললেন কোটা সমস্যা নিয়ে

Slider জাতীয়

16997

আলোচনার মাধ্যমে কোটা সমস্যার সমাধানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এ কথা বলেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালীন রাত দেড়টার দিকে সরকারের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাংবাদিকদের কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই কোটা ব্যবস্থা চলে আসছে। এটা সংস্কারের জন্য শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছে। বিষয়টি সম্পর্কে সরকার এবং সরকার প্রধান জানেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সোমবার বেলা ১১টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আলোচনায় বসবেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, কোথায় কখন আন্দোলনকারীরা বসতে চান সেটা তারা নিজেরাই আলাপ আলোচনা করে ঠিক করবেন। আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবরের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে কোনো শিক্ষার্থী নিহত হয়নি। এখানে সরকারবিরোধী লোকজন প্রবেশ করেছে। যার কারণে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এসব গুজবে কান না দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আবাসিক হলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে রোববার সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ও এর আশপাশ এলাকায় অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর একের পর এক কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান নিক্ষেপ করে পুলিশ। আন্দোলকারীদের দাবি, এতে ৬০-৭০ জন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন- আকরাম হোসেন (২৬), আবু বকর সিদ্দিক (২২), মো. রফিক (২৪), রাফি আলামিন (২২), রাজ (২৩), সোহেল (২৫), ওমর ফারুক (২৫), খোরশেদ (২৬), মাহিম (২২), আসলাম (২৩) ও আওলাদ হোসেন, শাহ পরাণ (২২), অমিত (২৩) রবিন (২২) ও রাসেল (২২)।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। আবার এখনো অনেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে কারো অবস্থা গুরুতর নয়। হাসপাতালে জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক মো. আলাউদ্দিন বলেন, আহত সবাই আশঙ্কামুক্ত।

পরে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে বিভিন্ন হলের নেতা-কর্মীদের ডেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ। সারা রাত ধরে আন্দোলনকারী ও ছত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেন। এর মধ্যে পুলিশ-ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, টিয়ারগ্যাস ও গুলি নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের মধ্য থেকে ১৫-২০ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ। ছাত্রীদের পুলিশ, প্রক্টর ও আবাসিক শিক্ষকরা সরিয়ে নিতে চাইলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বে না বলে জানান। পরে পুলিশ প্রক্টর ও শিক্ষকরা চলে যায় এবং ছাত্রীরা টিএসসির ভেতর ও বিভিন্ন হলের ফটকে অবস্থান নেন। এ সময় কয়েকজন ছাত্রীকে রক্তাক্ত অবস্থায় টিএসসিতে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তাদের দাবি, মেডিক্যালে ফোন দিলেও অ্যাম্বুলেন্স আসতে দেওয়া হচ্ছে না। সর্বশেষ ভোর সোয়া ৫টার তথ্য অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে কয়েকশ র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে রাতে পৌনে ৮টার দিকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর আন্দোলনকারীরা কিছুটা পিছু হটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকায় অবস্থান নেন। অন্যদিকে পুলিশ চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নেয়। টিএসসি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত পুরো এলাকায় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে আর আন্দোলনকারীরা সড়কের ওপর আগুন জ্বালায়। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রোববার দুপুর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। কেন্দ্রীয়ভাবে রোববার বেলা ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন তারা।

কোটা সংস্কার কর্মসূচিতে অংশ নেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী। তাদের দাবি, বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংস্কার করে কমাতে হবে। চাকরিতে কোটা সব মিলিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছিলেন। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা শাহবাগের মূল রাস্তায় অবস্থান নেওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। সে সময় আন্দোলনকারীরা বলছিলেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট আলোচনা শুরু না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং শাহবাগ মোড়ে অবস্থান অব্যাহত রাখবেন।

তখন থেকে শাহবাগ মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে কঠোর অবস্থান নিতে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। এ সময় আন্দোলনকারী ও পুলিশ সদস্যদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিতে দেখা যায়। বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৫৬ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের অগ্রাধিকার কোটা রয়েছে। আর বাকি ৪৪ শতাংশ নিয়োগ হয় মেধা কোটায়। এ জন্য এই কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *