এক পরকীয়া ভেঙে চুরমার দুটি সাজানো সংসার। স্ত্রী স্নিগ্ধা ও প্রেমিক কামরুল মিলে আইনজীবী রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে খুনের ঘটনায় বিস্মিত রংপুরবাসী। এ ব্যাপারটি নিয়ে সব জাইগায় ক্ষোভ-ধিক্কার। এদিকে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দুই সন্তানের মা স্নিগ্ধা ভৌমিক ও এক সন্তানের বাবা কামরুল ইসলামের পরকীয়া প্রেমের গল্প।
প্রায়ই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটির পর সব শিক্ষকদের পরে বের হতো স্নিগ্ধা ও কামরুল। প্রায়ই তারা মোটরসাইকেলে করে দূরে নিভৃত স্থানে গিয়ে সময় পার করত। অ্যাড. রথীশ ভৌমিকের দুই সন্তানের মধ্যে এলএলবি অনার্স পড়ুয়া পুত্র ঢাকায় থাকতেন। নবম শ্রেণি পড়ুয়া কন্যা থাকত বাসায়। কন্যা স্কুলে চলে যাওয়ার পর কামরুল পেছনের দরজা দিয়ে স্নিগ্ধার বাসায় গিয়ে গোপনে অবৈধ মেলামেশা করত। বিষয়টি রথীশ ভৌমিক আঁচ করতে পারলে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে।
এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এলাকাবাসীর জানায়, তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৪ সালে ১৯৯৪ সালে অ্যাড. রথিশ চন্দ্র ভৌমিকের স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিক ধর্মীয় শিক্ষক এবং কামিল পাস করা কামরুল ইসলাম একই সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। স্নিগ্ধা ভৌমিক শান্ত স্বভাবের হলেও কামরুল ইসলাম চতুর ও চঞ্চল প্রকৃতির। হাসি, ঠাট্টা করতো সবার সঙ্গে। দীর্ঘদিন চলার পথে শিক্ষক স্নিগ্ধা ও কামরুলের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে উঠে।
এ সম্পর্কের কারণে স্নিগ্ধার দাপ্তরিক যাবতীয় কাজকর্ম কামরুল করে দিত। বিনিময়ে স্নিগ্ধা বাড়ি থেকে টিফিন বক্সে করে কামরুলের জন্য খিচুড়ি, ছানা, পায়েসসহ ফলমূল নিয়ে এসে তাকে খাওয়াতেন। তার সহকর্মীরা প্রশ্ন করলেও স্নিগ্ধা বলত আমার কাজ করে দেয় বিধায় তাকে নাস্তা খাওয়াই। এসব বিষয় জানতে পারেন স্নিগ্ধার স্বামী রথীশ চন্দ্র ভৌমিক। তিনি শিক্ষক কামরুলকে সাবধান করে দেন। এ থেকে তাদের মেলামেশা বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে মোবাইল ফোনে কামরুল আর স্নিগ্ধা পরিকল্পনা করে কীভাবে আগের সম্পর্ক ফিরিয়ে আনা যায়। তারা দিনে কখনো ৩০-৩৫ বারও কথা বলেছেন। এসব বিষয় নিয়ে রথীশের পরিবারে নেমে আসে চরম অশান্তি। দেখা দেয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ও বিরোধ। স্নিগ্ধা প্রায়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বামীকে গালমন্দও করতো।
সম্প্রতি তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রথীশ প্রধান শিক্ষিকাকে শোকজ করার তাগিদ দেন। এরই এরফলে প্রধান শিক্ষিকা ৪ঠা মার্চ তাকে শোকজ করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে উত্তর দিতে বলেন। শোকজ নোটিশ পাওয়ার পর কামরুল তার চিঠির জবাব দিলেও সন্তোষজনক না হওয়ায় ম্যানেজিং কমিটির নির্দেশে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয় অভিভাবক সদস্য বিপুল সরকারকে।
অপর দুই সদস্য হলেন- শিক্ষক প্রতিনিধি মতিউর রহমান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক বেলাল হোসেন। ২৮শে মার্চ ওই তদন্ত কমিটি কামরুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। শিক্ষক শাহরুল হুদাসহ অন্যরা বলেন, ৩০শে মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অ্যাড. রথীশ চন্দ্র ভৌমিক নিখোঁজ সংবাদ শুনে আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে ৩১শে মার্চ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করি। ওই কর্মসূচিতে কামরুলও উপস্থিত ছিল এবং সে স্বাভাবিকভাবে কর্মসূচি পালন করে। তার চোখ- মুখ দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও এবং মাজারের খাদেম হত্যা মামলার সরকারি আইনজীবী দায়িত্বে ছিলেন। নিখোঁজে পর থেকে এই ঘটনার জন্য জামায়াত-শিবির ও জঙ্গিদের দায়ী করে আওয়ামী লীগ, আইনজীবী সমিতি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদ, পূজা উদযাপন পরিষদ, ক্ষত্রিয় সমিতি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন আন্দোলনে নামে। সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান, সংবাদ সম্মেলন, গণঅনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের আন্দোলনে তোলপাড় শুরু হয় প্রশাসনে।
স্নিগ্ধা ভৌমিক র্যাবকে জানায়, পরিবারিক কলহ, সন্দেহ ও অশান্তির কারণে সে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হয়ে স্বামী রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে ভাতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তাকে এ কাজে সহায়তা করে তার কথিত প্রেমিক কামরুল।