অপকৌশলে ঋণ দিলে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

308025_173
অপকৌশলের মাধ্যমে নতুন ঋণ দিলে ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাটের ঘটনা ঠেকানোর জন্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এর আগে দেশের ব্যাংকব্যবস্থা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ লুটপাটের ঘটনা কিভাবে ঠেকানো যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে আরো কার্যকর গবেষণা করার সুপারিশ করেছিল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের বাস্তবায়নের অগ্রগতি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরনো খেলাপি দায়কে অপকৌশলের মাধ্যমে নিয়মিত দেখিয়ে নতুন করে ঋণের নামে অবৈধ আর্থিক সুবিধা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটি বন্ধের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ শ্রেণিকরণ ও পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা যথাযথ পরিপালন করতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এ দিকে ব্যাংক ও এর শাখা থেকে যাচাই-বাছাই না করেই অযৌক্তিকভাবে বিপুল এলসি খোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বিপুল ফান্ডেড-ননফান্ডেড ঋণসুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। আবার বিলের মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের চেষ্টা না করেই ক্রমাগত তা ফান্ডেড ঋণে পরিণত করছে। এভাবে সৃষ্ট তলবি ঋণ পরে দীর্ঘমেয়াদি ঋণে পরিণত হচ্ছে। এটি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ঋণ দিয়ে তা আদায় করতে পারছে না ব্যাংক। এতে ফি বছরই খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ঋণের সুদের হারে। কাক্সিক্ষত হারে সুদহার কমাতে পারছে না। আবার ঋণ আটকে পড়ায় ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নতুন ঋণ প্রদান করতে পারছে না। ফলে তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাড়ছে। কমছে প্রকৃত আয়। এভাবেই দিন দিন দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনেও খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার জন্য আইনগত জটিলতার কথা বলা হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ে সবচেয়ে বড় জটিলতা দেখা দিয়েছে আইনগত জটিলতা। শ্রেণিকৃত ঋণ আদায়ে আইনি জটিলতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। খেলাপি গ্রাহকেরা ঋণ পরিশোধ না করার জন্য বিভিন্ন আইনি ফাঁকফোঁকর বের করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খেলাপি গ্রাহকেরা শ্রেণিকরণ হতে বেরিয়ে আসার জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে শ্রেণিকরণের ওপর স্থগিতাদেশ নিচ্ছেন। এ সুবাদে তারা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণসুবিধা নিচ্ছেন। কারণ একজন ঋণখেলাপি অন্য কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারেন না। এমনকি জাতীয় কোনো নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে আইনগত বাধা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো প্রকৃতপক্ষে একজন ঋণখেলাপিকেই গ্রাহক হিসেবে গ্রহণ করছে। ওই গ্রাহক আবার খেলাপি হয়ে আবার আদালতে মামলা করছেন। এভাবে ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তারা আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করছেন। এতে ব্যাংকগুলোর জন্য অত্যন্ত ব্যয় সাপেক্ষ হয়ে দেখা দিচ্ছে। একই সাথে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকায় ব্যাংকগুলোর তহবিল সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করছে। ব্যাংকগুলো যে ঋণ দিচ্ছে তা আদায় হচ্ছে না। আবার আমানত প্রবাহও কমে গেছে। ফলে ব্যাংকে নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ সঙ্কট মেটাতে এক দিকে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে, অপর দিকে ঋণের সুদহার বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *