বারবার আন্দোলনে যাওয়ার কথা বলেও এখনো সেভাবে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেনি বিএনপি। চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে চলছে গণসংযোগ কর্মসূচি। এবার সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে নামতে চায় দলটি। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের বিএনপিপন্থী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। তবে এসব ছাড়িয়ে এখন দেশব্যাপী আলোচনার ঝড় তুলেছে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তার বৈঠকের খবর।
যদিও বিএনপি বলছে, এই ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। এই খবর মিথ্যা। আবার বিএনপিরই দায়িত্বশীল কেউ বলছেন, বৈঠক হলেও এতে দোষের কিছু নেই। আর নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কেউ বলছেন, বিবেকের তাড়নায় অনেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এই যখন অবস্থা তখন মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে প্রশ্ন জাগে আসলে বিএনপিতে কার কথা ঠিক? বা কার কথা বিশ্বাসযোগ্য?। কেউ আবার বলছেন, কে বিএনপির মূখপাত্র?।
বৃহস্পতিবার রাত সোয়া নয়টার দিকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের আমলে বিভিন্ন সময় বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হওয়া বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। যা চলে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত। বৈঠকের খবর শোনার পর সেখানে গণমাধ্যমকর্মীরা ভিড় করেন। এরপর থেকে বিষয়টি এখন ‘টক অফ দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়। বিএনপি বৈঠকের কথা অস্বীকার করলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে খালেদা জিয়া সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই বৈঠক হয়েছে। তারা এটাকে হালকাভাবে নিচ্ছেন না। তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বৈঠকের দিন দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলে তিনি বলেন, “আমাদের রেগুলার মিটিং হয়েছে।” আর বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না এ ধরনের বৈঠক হয়নি।” শুধু অস্বীকার নয়, পরে মধ্যরাতে দলীয় প্যাডে বৈঠকের খবরকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল।
কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল বৃহস্পতিবার রাতে কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “এটা সিডিউল কোনো বৈঠক ছিল না। সাবেক অনেক সচিব আছেন যারা কার্যালয়ের কর্মকর্তা। তারা নিয়মিত এখানে আসেন।”
বর্তমান সচিবদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে মারুফ কামাল খান সোহেল বলেন, “আমরা বর্তমান কোনো সচিবকে চিনি না। যদি কার্যালয়ে বর্তমান সচিবদের কেউ এসে থাকে তাহলে সরকার তা বলতে পারবে। শুনেছি অনেকে তাদের সমস্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন। এটা তো দোষের কিছু না। অতীতেও সরকারি কর্মকর্তা জনতার মঞ্চে বক্তব্য রেখেছেন।”
অন্যদিকে বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব এম এ হালিম সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে আমাদের সিডিউল কোনো বৈঠক ছিল না। নিয়মিত যেমন আসি তেমনি আমরা ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করেছি।”
এখানে সচিবদের বৈঠক হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কই না তো, এমন কোনো বৈঠকের খবরতো জানি না। না, ওই রকম কিছু ছিল না।” এ সময় বৈঠকে কারা উপস্থিত ছিলেন সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
দলীয় একটি সূত্রে জানা গেছে, এম এ হালিম আগামী দিনের আন্দোলনে পেশাজীবী বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা যারা নানা কারণে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব পালন করছেন।
বৈঠক নিয়ে সংশ্লিষ্টদের এমন বক্তব্যের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া এক মন্তব্য করে গোল পাকিয়ে ফেলেন। শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে বৃহস্পতিবার রাতে বৈঠকের কথা অনেকটা স্বীকার করে তিনি বলেন, “সাক্ষাতের বিষয়ে ক্লিয়ার করার কোনো সুযোগ আমার নেই। যেহেতু আমি উপস্থিত ছিলাম না। তবে আমি যেটা বলতে পারি তা হলো বিবেকবান নাগরিক, প্রবীণ নাগরিক, দেশ পরিচালনায় যাদের অভিজ্ঞতা এবং সেক্রিফাইস রয়েছে, তারাও আজ উপলব্ধি করেছেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর কাছে বলার। যাতে তাদের বিবেক যে দুর্নীতিমুক্ত, শোষণমুক্ত, আইনের শাসনের সমাজ চান, সে সমাজে কাজের সে সুযোগ যাতে তারা পান, সে কথা বলার জন্য আমি মনে করি তারা গিয়েছেন।”
তার এই বক্তব্যের পর নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের সন্দেহের তৈরি হয়। কেউ বলছেন, আসলেই বৈঠক হয়েছে। বিএনপি তা লুকানোর চেষ্টা করছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, দলের মহাসচিব বলার পর আর কারো কথা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শুক্রবার বিকেলে গণতন্ত্র মুক্তি দিবসে জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে আসা বিএনপির কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে নতুন বার্তা ডটকমের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কথা হয়।
ছাত্রদলের একজন কেন্দ্রীয় সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “যেকোনো বিষয়ে দলের সবার একটা অবস্থানে থাকা উচিত। আওয়ামী লীগে এটা থাকলেও আমাদের দলে এটা নেই। যা দুঃখজনক।”
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একজন কর্মী মারুফ কামাল খানের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এতো বড় একটি সেনসেটিভ ইস্যূতে তিনি কথা বলার কে?।” দলকে বিপদে ফেলার জন্য এসব করা হচ্ছে বলেও তার ধারণা।
অন্যদিকে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন বার্তা ডটকমকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, “অতীতে আওয়ামী লীগ মনা অনেক সরকারি কর্মকর্তা সচিবালয়ের সামনে সরকার বিরোধী অনেক কর্মকাণ্ড করেছেন তারা হয়তো সে কথা ভুলে গেছেন। স্বাধীন দেশে যে কেউ তার পছন্দের লোকের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেন। তবে যদি কেউ আইন লঙ্ঘন করেন তাহলে চাকুরীবিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে ।”